ব্ৰজবিহারী বর্মণ (১৯০১ – ১০-১২-১৯৬০) নোয়াপাড়া-ময়মনসিংহ। কুঞ্জকিশোর। ১৯২৪ খ্ৰী. ‘বর্মণ পাবলিশিং হাউস’ প্ৰতিষ্ঠা করে ভারতবর্ষে তিনিই প্ৰথম সাম্যবাদী সাহিত্য প্রচারের দিকে এগিয়ে আসেন। বি-এ পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। ১৯২১ খ্রী. বিপ্লবী বারীন্দ্রনাথ ঘোষের ‘আৰ্য পাবলিশিং হাউসে’ দায়িত্বশীল কর্মী হিসাবে যোগ দেন। এখান থেকে প্ৰকাশিত কাজী নজরুলের যুগবাণী বাজেয়াপ্ত হওয়ায় শ্ৰীঅরবিন্দের নির্দেশে আর্য পাবলিশিং হাউস থেকে শ্ৰীঅরবিন্দ ও তাঁর শিষ্যদের গ্রন্থাদি ব্যতীত অন্য রাজনৈতিক পুস্তক প্রকাশ নিষিদ্ধ হলে তিনি এই প্ৰতিষ্ঠান ছেড়ে দেন এবং নিজের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে দেশীয় ভাষায় রাজনৈতিক সাহিত্য গড়ে তোলার কাজে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বর্মণ পাবলিশিং হাউস’। মহামায়া প্রেস নামে কাজ চলার মত একটা প্রেসও বসান ঐ একই বাড়ীতে-১৯৩নং কর্নওয়ালিশ স্ট্রীটে। তাঁর লেখা ‘ক্ষুধিরাম’ পুস্তকটি ১৯২৪ খ্ৰী. প্রকাশের অল্পদিনের মধ্যে সরকার বাজেয়াপ্ত করেন। সংস্থার দ্বিতীয় গ্ৰন্থ নরেন রায়ের সান-ইয়েৎ-সেনও নিষিদ্ধ হয়। বিশের দশকে এখান থেকে প্ৰকাশিত হয়। ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের অপ্রকাশিত রাজনৈতিক ইতিহাস (২ খণ্ড) সহ চারখানা বই এবং কাজী নজরুল ইসলামের ‘ফণিমনসা’ ও ‘সর্বাহারা’ (১৯২৮), রেবতী বর্মণের ‘তরুণ রুশ’, সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিপ্লবী রুশিয়া’, মণিময় প্রমাণিকের ‘ঋষি কার্ল মার্ক্স’, সরোজ আচার্যের ‘নব্য রুশিয়া’, তাঁর নিজের লেখা ‘বীর বাঙ্গালী যতীন দাস’, ‘তরুণ বাঙ্গালী’ (১৯২৯), ‘ফাঁসীর সত্যেন’ (১৯৩০) প্রভৃতি। তাঁর শেষোক্ত গ্ৰন্থ দুখানিকেও নিষিদ্ধ করা হয় এবং প্রেস তল্লাশি করে সরকার বইগুলি বাজেয়াপ্ত করেন। ১৯৩০ খ্রী. গ্রেপ্তার হয়ে দু’বছর জেলে থাকা-কালে তিনি কমিউনিস্ট নেতা বঙ্কিম মুখার্জীর রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। জেল থেকে বেরিয়ে এবার তিনি প্রধানতঃ মার্ক্সীয় গ্রন্থাদির অনুবাদ প্রকাশে উদ্যোগ নেন। প্রকাশিত হয় এঙ্গেলসের ‘সমাজতন্ত্রবাদ-কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক’, ‘কমিউনিজম’, ‘কমিউনিস্ট ইস্তহার’; লেনিনের ‘গণতন্ত্র ও বিপ্লবী শিক্ষা’; মার্ক্সের ‘ভারতে ইংরেজ শাসন’ প্রভৃতি। ১৯৩৩ খ্রী. ক্রিমিন্যাল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-এ আবার তিনি গ্রেপ্তার হন। প্রেসও বাজেয়াপ্ত হয়। ১৯৩৮ খ্রী. একটি রুগণ পা নিয়ে ছাড়া পেয়ে বন্ধ সংস্থার কাজ আবার শুরু করেন। পাবলিশিং হাউস উঠে এল ৭২নং হ্যারিসন রোডে, নূতন প্রেস হল-ঘোষ প্রেস। মার্ক্স, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিনের লেখা বই অনুবাদের কাজে অন্যান্যদের সঙ্গে তিনি নিজেও হাত লাগান। ভারতের কৃষক আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের উপর লেখা বইও তিনি প্ৰকাশ করেছেন। কাজী নজরুলের মোট সাতখানি বই তিনি ছাপিয়েছেন। কোনও রাজনৈতিক দলের সভ্য তিনি ছিলেন না। কিন্তু আমৃত্যু বহু বাধা সত্ত্বেও বাঙালীর রাজনৈতিক চেতনা সমৃদ্ধ করার উপযোগী বই প্রকাশ করেগেছেন।
পূর্ববর্তী:
« ব্রজেন্দ্রলাল মিত্র, স্যার
« ব্রজেন্দ্রলাল মিত্র, স্যার
পরবর্তী:
ব্ৰজভূষণ গুপ্ত »
ব্ৰজভূষণ গুপ্ত »
Leave a Reply