বেলাবাসিনী গুহ (৪-৩-১৯০৫ – জুলাই ১৯৬৭) ঢেউখালি-ফরিদপুর। যোগেন্দ্ৰচন্দ্র ঘোষ। পিতৃগৃহে বা শ্বশুরালয়ে তাঁর শিক্ষার কোনও সুযোগ হয়নি। শিশুকাল থেকেই চিত্রশিল্প ও ভাস্কর্যের দিকে প্রবল অনুরাগ ও দক্ষতা ছিল। গ্রামাঞ্চলে তখন তুলি পাওয়া যেত না বলে বেড়ালের লোম দিয়ে তুলি করে ছবি আঁকার স্পৃহা মেটাতেন। তের বছর বয়সে ঢাকার ব্ৰজযোগিনী গ্রামের সুবোধচন্দ্ৰ গুহর সঙ্গে বিবাহ হয়। স্বামীর সঙ্গে কলিকাতায় আসার পর আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য নানাভাবে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেছেন। কোনও স্কুলে বা বিখ্যাত শিল্পীর কাছে শিক্ষার সুযোগ না পেলেও তাঁর সহজাত প্ৰতিভাসৃষ্ট জল রং ও তেল রং-এর ছবি, জয়পুরী মিনারের কাজ, মাটির তৈরী প্রতিকৃতি বহু শিল্পী ও শিল্পরসিকের প্রশংসা অর্জন করে। ১৯৪০–৪১ খ্রী কলিকাতার একটি পাবলিসিটি কোম্পানীতে কমার্সিয়াল আর্টিস্ট হিসাবে বছরখানেক নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর সময়ে সরকারী কলা বিদ্যালয়ে মেয়েদের প্রবেশাধিকার ছিল না। মেয়েদের শিল্প-শিক্ষার এই অভাব দূর করার জন্য তিনি ‘ভারতবর্ষ’ ও অন্যান্য পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। পরবর্তী কালে কলা মহাবিদ্যালয়ের দ্বার মেয়েদের জন্য উন্মুক্ত হলেও তিনি সে সুযোগ পাননি। সেজন্য তিনি নিজেই ‘মহিলা চিত্র বিদ্যালয়’ নামে একটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ রেখেছিলেন। বিপ্লবী ভূপেশ নাগ তাঁর মাতুল। শান্তি দাস প্রতিষ্ঠিত ‘দীপালী শিক্ষামন্দিরে’ বিনা পারিশ্রমিকে অঙ্কন শেখাবার ভার নেন। সেই সময়েই তিনি বিপ্লবী পুলিন দাসের কাছে। লাঠিখেলা, ছোরাখেলা ও যুযুৎসু শেখেন। ১৯৪২—৪৭ খ্রী অবধি বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন ও ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফেরারী বিপ্লবীদের বাড়িতে রাখার জন্য এবং বেআইনী পুস্তিকা ও জিনিসপত্র রাখার জন্য তাকে বহু সময়ে পুলিসী নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাঁর কন্যা অহনা ছাত্রীজীবনে কলেজে রাজনৈতিক ভাষণদানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ১৯৪৫ – ৪৬ খ্রী. দেশব্যাপী সাম্রাজ্যবিরোধী গণ-আন্দোলনের সময়ে মহারাজ ত্ৰৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ভাষণ দিয়েছেন। ১৯৪৬–৪৭ খ্ৰী. দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃস্থাপিত করার জন্য কলিকাতা পোর্টের মুসলিম। শ্রমিক বস্তিতে গিয়ে কাজ করেছেন। এইভাবে ১৯৫৬ খ্রী. অবধি বিবিধ রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন। ১২৫৮-১৯৫৭ খ্রী. কন্যা অহনার মৃত্যুর পর বাইরের জগত থেকে সরে এস পুরাণ, বেদ, হিন্দু জ্যোতিষ নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। নক্ষত্রমণ্ডলীকে তিনি বেশ ভালভাবেই চিনতেন ও নর্টনের ‘স্টার এটলাসে’র সাহায্যে সেগুলি অধ্যয়ন করেন। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির সঙ্গে তিনি হোরাশাস্ত্র ও অষ্টাদশ পুরাণ সম্পর্কে বহু আলোচনা করেছেন। ফলিত জ্যোতিষেও অভিজ্ঞ ছিলেন। সংস্কৃত পূর্বেই ভাল জানতেন এবং এইসব অধ্যয়নের সময় ইংরেজীও শিখে নেন। জীবনের শেষ তিন বছরে বহু বিনিদ্র রজনীর পরিশ্রমজাত লেখাগুলি একত্রিত করে ‘ঋগ্বেদ ও নক্ষত্র’ নামক পাণ্ডুলিপি রেখে যান। তাঁর পুত্রেরা পরে ঐ বইটি প্রকাশিত করেছেন।
পূর্ববর্তী:
« বেলা মিত্র
« বেলা মিত্র
পরবর্তী:
বেলায়েত হোসেন »
বেলায়েত হোসেন »
Leave a Reply