বীরচন্দ্ৰ মাণিক্য। (১৮৩৯ – ১৮৯৬) ত্রিপুরা। রাজবংশে জন্ম। ৫ আগস্ট ১৮৬২ খ্রী তিনি ‘মাণিক্য’ উপাধি-গ্ৰহণ করে রাজদণ্ড ধারণ করেন। রাজত্বকালে ত্রিপুরায় দাসবিক্রয়, সতীদাহ প্রভৃতি কুপ্রথা ও দুনীতি দমন করেছিলেন। সুগায়ক ও বহুবিধ যন্ত্রে সিদ্ধহস্ত বীরচন্দ্রের দরবারে যদুভট্ট, নিসার হোসেন, কাশেম আলী প্রমুখ ভারতবিখ্যাত বহু সঙ্গীতজ্ঞ ও যন্ত্রশিল্পী সাদরে স্থান পেয়েছিলেন। নিজে খেয়াল টপ্লাও রচনা করেন। চিত্রকলায়ও তাঁর কৃতিত্ব ছিল। কয়েকজন দেশী ও ইউরোপীয় চিত্রকর তাঁর দরবারে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রযত্নে প্ৰতি বছর রাজপ্ৰসাদে চিত্ৰপ্ৰদৰ্শনীও হত। বাংলা ভাষার উন্নতিবিধানে ও পুষ্টিসাধনে ত্রিপুরোরাজগণের কীর্তি অতুলনীয়। বীরচন্দ্রও রাজকাৰ্যে ইংরেজী ভাষার ব্যবহার আরম্ভ হতে দেখে আইন করে বিশেষ প্রয়োজন ভিন্ন রাজকার্যে বাংলা ভাষার ব্যবহার বজায় রাখেন। সুকবি ছিলেন। তাঁর রচিত বহু কবিতা ও গান আছে। তাছাড়া বিবিধ প্ৰাচীন গ্রন্থ প্রচারের ও বহু সদ্যগ্রন্থ মুদ্রণের জন্য তিনি প্রচুর অর্থব্যয় করেছেন। পণ্ডিত রামনারায়ণ বিদ্যারত্নকে দিয়ে তিনি বিবিধ টীকা ও বঙ্গানুবাদসহ শ্ৰীমদ্ভাগবত গ্ৰন্থ সম্পাদন করান এবং বিনামূল্যে বিতরণ করেন। নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব ছিলেন এবং বহু বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করেছেন। তাঁর রচিত ৬টি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘হোরি’ ও ‘ঝুলন’ গ্রন্থের গীতাবলী বৈষ্ণব পর্ব উপলক্ষে গীত হয়ে থাকে। তাঁর প্রযত্নে নিরক্ষর পার্বত্য কুকিজাতিও কিছু পরিমাণে বাংলা লেখাপড়া শিখেছে।
পূর্ববর্তী:
« বীরচন্দ্ৰ প্ৰভু
« বীরচন্দ্ৰ প্ৰভু
পরবর্তী:
বীরনারায়ণ বাগুরী »
বীরনারায়ণ বাগুরী »
Leave a Reply