বিমলপ্ৰতিভা দেবী (ডিসে ১৯০১ – আগস্ট ১৯৭৮) কাঁচড়াপাড়া—নদীয়া। কটকে জন্ম। পিতা সুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রবর্তক সঙ্ঘের কর্মী ছিলেন। পিতার কাছ থেকেই স্বদেশী কাজে অনুপ্ৰাণিত হন। কলিকাতার এক রক্ষণশীল ও ধনী বনেদী পরিবারের ডাঃ চারুচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ হয়। ১৯২১ খ্রী. উৰ্মিলা দেবীর ‘নারী কর্মমন্দিরে’ যোগদান করে। শ্বশুর গৃহের অমতে অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯২৭ খ্রী. নিখিল ভারত নওজোয়ান সভা, যার সভাপতি ছিলেন। ভগৎ সিং, তাঁর বাঙলা শাখার সভানেত্রী হন। বাড়ির অমতের জন্য বহুদিন তাঁর এসমস্ত কাজ গোপনে করতে হয়েছে। ১৯২৮ খ্রী. কলিকাতা কংগ্রেসের সময় খোলাখুলিভাবে কংগ্রেসের কাজ শুরু করেন। ১৯৩০ খ্রী. লবণ সত্যাগ্ৰহ আন্দোলনে শান্তি দাস (কবীর) প্রভৃতিদের সঙ্গে ‘নারী সত্যাগ্ৰহ সমিতি’ করে ঐ আন্দোলনকে সংগঠিত করেন। জুন ১৯৩০ খ্ৰী দেশবন্ধুর মৃত্যুদিবস পালন উপলক্ষে ‘নারী সত্যাগ্ৰহ সমিতি’ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কলেজ স্ট্রীট থেকে দেশবন্ধু পার্কে মিছিল নিয়ে যাবার সময় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে ছয় মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। বিপ্লবী দলের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ মামলা পরিচালনার জন্য মৃত বিপ্লবীদের চিত্র-সম্বলিত অ্যালবাম বিক্রি করে বহু অর্থ সংগ্ৰহ করেন। মে ১৯৩১ খ্রী ত্রিপুরা জেলার যুব সম্মেলনে যোগদান করার সময় সেখানকার বিপ্লবী কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হন। ১৯৩১ খ্রী. মানিকতলা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হন। কিন্তু মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে বিনাবিচারে সিউড়ী, হিজলী প্রভৃতি জেলে ছয় বছর আটক থাকেন। ১৯৩৮ খ্ৰী. মুক্তির পর কংগ্রেসের নিখিল ভারত বন্দীমুক্তি আন্দোলন কমিটির সম্পাদিকা হন। ১৯৪০ খ্রী. ত্রিপুরী কংগ্রেসের পর কংগ্রেস সদস্য পদ ত্যাগ করেন। ১৯৪২ খ্রী. রাজদ্রোহমূলক ইস্তাহার বিলি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এবং দু’বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন। পরে নিরাপত্তা বন্দী হিসাবে ১৯৪৫ খ্রী. পর্যন্ত প্রেসিডেন্সী জেলে আটক থাকেন। মুক্তি পাবার পর শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হন। বামপন্থী ও শ্রমিক আন্দোলনের অন্যান্য মহিলা নেত্রী ছিলেন সন্তোষকুমারী দেবী, ডঃ প্ৰভাবতী দাশগুপ্ত, ভারতী রঙ্গ, কমলা দেবী চট্টোপাধ্যায়, সুহাসিনী জাম্বেকর প্রভৃতি। স্বামী ও সন্তানহারা হয়ে শেষ-জীবন দুরবস্থায় কাটে।
Leave a Reply