বিমলচন্দ্র ঘোষ, ডাঃ (২৮-৭-১৮৭৪ – ১১-১-১৯৪৮) চন্দননগর-হুগলী। গোপালচন্দ্র। পিতার কর্মকেন্দ্ৰ এলাহাবাদে জন্ম। খ্যাতনামা শিক্ষাব্ৰতী ও বিশিষ্ট চিকিৎসক, বিমলচন্দ্রের মাতা সারদা দেবী (ময়মনসিংহের শ্ৰীনাথ চন্দের ভগিনী) বালবিধবা ছিলেন এবং ১৮৭৩ খ্রী. ব্ৰাহ্মমতে তাঁর পুনরায় বিবাহ হয়। লক্ষ্ণৌ থেকে ১৮৮৮ খ্রী. এন্ট্রান্স ও ১৮৯২ খ্রী. বি-এ, এবং ১৮৯৪ খ্রী. এলাহাবাদের মুইর (Muir) সেন্ট্রাল কলেজ থেকে অঙ্কে এম.এ. পাশ করে বেরিলি কলেজে দুই বছর অঙ্ক ও বিজ্ঞানের লেকচারার ছিলেন। ১৮৯৬ খ্রী বিলাতে গিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জোনস কলেজে ভর্তি হন। ১৮৯৮ খ্রী. অনার্স ইন ম্যাথেমেটিক্যাল ট্রাইপোজ এবং ১৮৯৯ খ্রী. অনার্স ইন ন্যাচারাল সায়েন্স ট্রাইপোজ লাভ করেন। এ ছাড়া সিরীয়, হিব্রু, আর্মানী, ফারসী ও আরবী ভাষা অনুশীলন করে প্রতিভার পরিচয় দেন। বাংলা ও সংস্কৃতের জন্য বৃত্তি ও পুরস্কার লাভ করেন। ১৮টি ভাষায় তাঁর বুৎপত্তি ছিল। ১৯০০ খ্রী. দেশে ফিরে কিছুদিন কলিকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি অনুরাগ ছিল। এই উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় বার বিলাত যান এবং ১৯০৪ খ্রী. এল-এস-এ ডিপ্লোমা লাভ করে লন্ডনের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী সরলাবালাও তাঁর সঙ্গে বিলাতে দু’বছর থেকে নাসিং ও ধাত্রীবিদ্যায় ডিপ্লোমা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য অল্পদিন পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। বিমলচন্দ্ৰ ১৯০৮ খ্ৰী. কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের M.B.B.C. ডিগ্ৰী লাভ করেন এবং পরে D.P.H. কোর্সও সম্পূর্ণ করেন। ডাক্তারি পড়া ও গবেষণার মধ্যে ১৯০২ খ্রী. এম-এ (ক্যান্টাব) পাশ করেন। ধর্মশাস্ত্রালোচনায়ও যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। ১৯০৩ খ্রী. Nomisian Divinity পুরস্কারের জন্য লেখা তাঁর প্রবন্ধ ‘The Doctrine of Holy Trinity in Relation to Modern Thought’ উল্লেখযোগ্য। Doctor of Divinity হবার জন্য থিসিস লিখে প্ৰশংসা পেলেও নিজেকে খ্রীষ্টান বলে স্বীকার না করায় উপাধি থেকে বঞ্চিত হন। ১৯০৯ খ্রী. বিদেশিনী স্ত্রী ডাঃ এডিথ ও পুত্র হ্যারি কেশবকে নিয়ে দেশে ফিরে বিদ্যাসাগর কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৩২ খ্রী. কলেজের সহ-অধ্যক্ষ ও পরে অধ্যক্ষ হয়ে ১৯৪১ খ্রী. অবসর গ্ৰহণ করেন। তাঁরই উৎসাহে বিদ্যাসাগর কলেজের নারী-বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২২ খ্রী. থেকে ৭ বছর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের (ধর্মতত্ত্ব) অধ্যাপনা করেন ও পরে এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজির অধ্যাপনার কাজ করেন। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে প্রাণিবিদ্যা পড়াতেন। পরীক্ষক হিসাবে পাঞ্জাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগ ছিল। এলবার্ট ভিক্টোর হসপিটাল, কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ছিলেন। অধ্যাপনা ও চিকিৎসার কাজ সমান দক্ষতায় করতেন। ১৯১০ খ্রী থেকে এদেশে তিনি চিকিৎসা ব্যবসায় শুরু করেন। ব্ৰাহ্ম ধর্মপালক ও প্রচারের ব্ৰতও তিনি গ্ৰহণ করেছিলেন। বিভিন্ন-পত্র-পত্রিকায় শিক্ষাবিষয়ক V3 চিকিৎসাশাস্ত্ৰ-সম্পৰ্কীয় প্রবন্ধাদি লিখতেন। All Bengal Calcutta University Teacher’s Association-এর সভাপতি ছিলেন। ১৯২৪ থেকে ১৯৩৩ খ্রী. তিনি কলিকাতা কর্পোরেশনের সঙ্গে কাউন্সিলার ও অল্ডারম্যান হিসাবে যুক্ত ছিলেন। হেলথ কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে কলিকাতায় ‘ম্যাটারনিটি হোম’, ‘নার্সিং অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘লেডিস পার্ক’ প্রভৃতির প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যাপকভাবে টীকা দেওয়ার প্রথা তাঁরই প্ৰচেষ্টায় প্রবর্তিত হয়। পতিতা নারীদের কল্যাণকর কাজে উদ্যোগী হয়ে ১৯২৭ খ্ৰী. পতিতাদের বালিকা কন্যাদের জন্য ১০ নং সিমলা লেনে ‘সরযূ-সদন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ‘নারী-মঙ্গল সমিতি’ পরিচালনায় ‘সরযূ-সদন’ সমাজ-সংস্কারের ইতিহাসে এক নূতন নির্দশন। তাঁর জীবনে অন্যান্যদের মধ্যে ব্ৰহ্মানন্দ কেশবচন্দ্ৰ সেন, প্রতাপচন্দ্র মজুমদার ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রভাব যথেষ্ট বেশি। ১৯২১ খ্রী. অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে নির্যাতন ভোগ করেন। প্রচীন বৈদিক ধর্ম, ইসলাম ও ইহুদীদের ধর্মশাস্ত্ৰ, বৌদ্ধতত্ত্ব এবং অন্যান্য ধর্ম-সম্পর্কেও গভীর পড়াশুনা করেছেন। কেশবচন্দ্ৰ প্রবর্তিত নববিধান তত্ত্বের সার্থক ব্যাখ্যাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ভারতবর্ষীয় ব্ৰাহ্মমন্দিরের এবং নববিধান মণ্ডলীর মুখপত্র Navavidhan-এর সম্পাদক ছিলেন। ধর্মপ্রচারে ভারতবর্ষের বহু স্থান ভ্ৰমণ করেছেন। সুনীতি শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক (১৯৩৩–৪২) ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ডাঃ এডিথ ঘোষ কলিকাতায় ধাত্রীবিদ্যা-পারদর্শিনী হিসাবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। জানুয়ারী ১৯৪৭ খ্রী. শ্ৰীমতী ঘোষ আততায়ীর হস্তে নিহত হন।
পূর্ববর্তী:
« বিমল সেন
« বিমল সেন
পরবর্তী:
বিমলচন্দ্ৰ দাস »
বিমলচন্দ্ৰ দাস »
Leave a Reply