বিনোদিনী দাসী (১৮৬৩ – ফেব্ৰু ১৯৪২) কলিকাতা। খ্যাতনামী নাট্যাভিনেত্রী। শৈশবে বিবাহ হলেও শ্বশুরবাড়ী যান নি। দারিদ্র্যের জন্য অল্প বয়সেই সাধারণ রঙ্গালয়ে যোগ দেন। ডিসে, ১৮৭৪ খ্রী. গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে ‘শত্রুসংহার’ নাটকে একটি পরিচারিকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। পরবর্তী নাটকে নায়িকার ভূমিকা পান। ১৮৭৫ খ্ৰী. গ্রেট ন্যাশনাল দলের সঙ্গে ভারতভ্ৰমণে গিয়ে অভিনয় করেন ও বহু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ১৮৭৭ খ্রী. কয়েক মাসের জন্য বেঙ্গল থিয়েটারে যোগ দেন। ঐ বছরই গিরিশচন্দ্রের অনুরোধে ন্যাশনাল থিয়েটারে এসে তাঁর শিক্ষায়, যত্নে এবং স্বীয় প্রতিভার সংযোগে বাঙলা তথা ভারতের শ্রেষ্ঠ মঞ্চাভিনেত্রীরূপে খ্যাত হন। মঞ্চের প্রতি অনুরাগের জন্য বহুবার অন্য স্থান থেকে প্ৰস্তাবিত বিপুল অঙ্কের অর্থের প্রলোভন সংবরণ করেন। তাঁর এই নিঃস্বাৰ্থ ত্যাগের ফলেই ষ্টার থিয়েটারের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। কিন্তু ১২ বছর সাফল্যের সঙ্গে অভিনয় করে খ্যাতির শিখরে থেকেই সহকর্মীদের অবিচারে এবং অন্যান্য নানা কারণে ১৮৮৬ খ্রী.অভিনয়-জীবন থেকে তিনি অবসর নেন। জীবনে অনেক দুঃখ ও শোক পেয়েছেন। সেসব কথা তাঁর রচিত ‘আমার কথা’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে। ৫০ টি নাটকে ৬০ টির অধিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। পত্র-পত্রিকায় ‘ফ্লাওয়ার অফ দি নেটিভ স্টেজ’, ‘প্ৰাইমা ডোনা অফ দি বেঙ্গলী স্টেজ’ উপাধি পেয়েছেন। গিরিশচন্দ্রের মতে ‘বিনোদিনীর মতো প্ৰতিভাশালী অভিনেত্রী সর্বদেশেই বিরল’। অভিনীত সকল চরিত্রে সুনাম হলেও গিরিশচন্দ্রের ‘চৈতন্যলীলা’ নাটকে চৈতন্যের ভূমিকায় তিনি যুগান্তকারী অভিনয়-নৈপুণ্যের পরিচয় দেন এবং শ্ৰীরামকৃষ্ণদেবের আশীৰ্বাদ-ধন্য হন। শেষ ধর্মচৰ্চা করে কাটিয়েছেন। সে সময়ে তাঁর দেখাশুনা করতেন নটী তারাসুন্দরীর কন্যা প্রতিভা। তাঁর সাহিত্য-চর্চা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কবিতা ও গদ্য লেখায় পারদর্শী ছিলেন। নটী কুলে একমাত্ৰ নাটক লেখিকা সুকুমারী আর বিনোদিনীকে বলা যায় কবি। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘বাসনা’ এবং কাব্যোপন্যাস ‘কনক ও নলিনী’। ‘আমার কথা’ গ্রন্থ ছাড়া তাঁর নাট্য জীবনের স্মৃতিমূলক গদ্য রচনা ধারাবাহিকভাবে ‘রূপ ও রঙ্গ’ মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
পূর্ববর্তী:
« বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়
« বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়
পরবর্তী:
বিনোদিনী বসু রায়চৌধুরী »
বিনোদিনী বসু রায়চৌধুরী »
Leave a Reply