বিধানচন্দ্র রায়, ডাঃ (১-৭-১৮৮২ – ১-৭-১৯৬২) পাটনা-বিহার। আদি নিবাস টাকী শ্ৰীপুর–চব্বিশ পরগনা। প্ৰকাশচন্দ্ৰ। প্ৰখ্যাত চিকিৎসক ও রাজনীতিজ্ঞ। ১৯০১ খ্ৰী. বি.এ. পাশ করে কলিকাতায় বসবাস শুরু করেন। কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯০৬ খ্রী. এল.এম.এস. এবং ১৯০৮ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.ডি. উপাধি পান। এরপর প্রাদেশিক মেডিক্যাল সার্ভিসে যোগ দিয়ে বিভিন্ন প্রদেশে ঘোরেন। ১৯০৯ খ্রী. বিলাত যান এবং ২ বছরের মধ্যে এম.আর.সি.পি, এবং এম.আর.সি.এস. ও পরে এফ.আর.সি.এস. উপাধি পান। দেশে ফিরে ক্যাম্বেল মেডিক্যাল স্কুলে (বর্তমান নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ) শিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবসায়ও আরম্ভ করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯১৬ খ্রী কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৮ খ্রী. সরকারী চাকরি ছেড়ে তিনি কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজের (অধুনা আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ) মেডিসিনের অধ্যাপক পদ গ্ৰহণ করেন। ১৯৩৫ খ্রী. রয়্যাল সোসাইটি অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন এবং ১৯৪০ খ্রী. আমেরিকান সোসাইটি চেস্ট ফিজিসিয়ানের ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯২৩ খ্রী. দেশবন্ধুর প্রভাবে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং স্বরাজ্য দলের পক্ষ হয়ে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথকে নির্বাচনে পরাজিত করে বাঙলার ব্যবস্থাপক সভায় সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯২৮ খ্রী. কলিকাতা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৩১–৩২ খ্রী. কলিকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। ১৯৩১ খ্রী. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বোম্বাই থেকে কলিকাতায় ফেরবার পথে ওয়ার্ধা স্টেশনে গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৭ খ্রী. বাঙলার পার্লামেন্টারী কমিটির সভাপতি হয়ে কংগ্রেসের নির্বাচন পরিচালনা করেন। ১৯৪২ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। জুন ১৯৪৪ খ্ৰী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিএস-সি. উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৪৭ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থীরাপে আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ খ্ৰী. পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আমৃত্যু ঐ পদে ছিলেন। ব্যবসায়ী হিসাবেও প্রতিভার ছাপ রেখে গেছনে। শিলং হাইড্রো ইলেকট্রিক কোম্পানীর অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন। জাহাজ, বিমান ও ইন্সিওরেন্স ব্যবসায়ের সঙ্গে যোগ ছিল। স্বাধীনতালাভের পর পশ্চিমবঙ্গের রূপায়ণে তাঁর ব্যক্তিত্ব সর্বতোভাবে প্রভাব বিস্তার করে। জীবদ্দশায় তিনিই ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসকরূপে স্বীকৃত ছিলেন। স্বীয় মাতা অঘোরকামিনীর নামে পাটনায় একটি নারী শিক্ষামন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। দুর্গাপুর অঞ্চলকে একটি বৃহৎশিল্প-এলাকায় পরিণত করে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নতির ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৯৬১ খ্রী. প্রজাতন্ত্র দিবসে তিনি ‘ভারতরত্ন’ উপাধি-ভূষিত হন। মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁর বাসভবনে রোগ-নির্ণয় গবেষণাকেন্দ্ৰ স্থাপিত হয়েছে।
পূর্ববর্তী:
« বিদ্যুৎপ্রভা বসু, ডাঃ
« বিদ্যুৎপ্রভা বসু, ডাঃ
পরবর্তী:
বিধুভূষণ বসু »
বিধুভূষণ বসু »
Leave a Reply