বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায় (সেপ্টে. ১৮৯৮ – ১৮-২-১৯৭৪) কৃষ্ণনগর-নদীয়া। কিশোরীলাল। মুক্তি-সংগ্ৰামী চারণ কবি ও সাংবাদিক। কৃষ্ণনগর সিএমএস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করে (১৯১৯) বি-এ পড়ার সময় অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। কৃষ্ণনগর কলেজের অধ্যাপক নৃপেন্দ্ৰচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিপ্লবী জীবন ও সাহিত্যমন্ত্রের দীক্ষাগুরু। জীবনের প্রথম দিকে সুভাষচন্দ্ৰ, হেমন্ত সরকার ও কবি নজরুলের অনুসারী হলেও রাজনৈতিক আদর্শে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ গান্ধীবাদী। দেশের স্বাধীনতাকামী সৈনিক হিসাবে তিনি পরিচিত ছিলেন। নদীয়া জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক থাকাকালে ১৯২২ খ্রী. ৬ মাস কারারুদ্ধ থাকেন। রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ১৯২৭ খ্রী. কিছুদিন শান্তিনিকেতনে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতা ছিল তাঁর কর্মজীবনের পেশা। বহু পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করেছেন। ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক থাকাকালে তাঁর বিখ্যাত কাব্য ‘সর্বহারার গান’ প্ৰকাশিত হয়। ১৯৩০ খ্রী লবণ সত্যাগ্ৰহ আন্দোলনে কলিকাতার সাংবাদিকতার কাজ ছেড়ে নদীয়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব গ্ৰহণ করেন। ১৯৩২ খ্রী. ৯ মাসের কারাবাস ঘটে। ১৯৩৩ খ্রী. সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকার আবির্ভাবের মূলে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ১৯৪২ খ্ৰী আন্দোলনে যোগ দিয়ে এক বছর জেলে কাটান। পরে সম্পাদক হিসাবে ‘দৈনিক লোকসেবক’, ‘কৃষক’, ‘ঊষা’ প্রভৃতি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। উত্তরকালে চরণ-কবি হিসাবে তিনি খ্যাত হন। এক সময় বাঙলার গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে জনসাধারণের ঘুম ভাঙাবার, তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার ভার নিয়েছিলেন। দীর্ঘকাল ধরে তিনি বহু কবিতা লিখে পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। অপর কবিতা-পুস্তক : ‘চারণগীতি’ ও ‘চারণ-কবি হুইটম্যান’। তাঁর গদ্য রচনাও তারুণ্য ও উদাত্ত যৌবনধর্মে বাণীময়। বহু বিষয় নিয়ে তিনি সুন্দর ও সহজ ভাষায় আলোচনা করে দেশের যুবসমাজকে এককালে নূতন নূতন চিন্তার খোরাক জুগিয়েছেন। ‘The Champion of the Proletariate’ তাঁর ইংরেজী গ্ৰন্থ। রবীন্দ্ৰকাব্য ও জীবনের একজন গুণগ্ৰাহী সমালোচক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ সংক্রান্ত তাঁর চারখানি বই-’বিদ্রোহী রবীন্দ্রনাথ’, ‘রিয়ালিস্ট রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্রসাহিত্যে পল্লীচিত্র’ ও ‘রবিতীর্থে’। প্রথমোক্তটি ১৯৩২ খ্রী. ইংরেজ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে বাঙলার রাজ্য বিধান সভায় তিনি দু’বার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। বিধানসভায় বাগ্মীতার জন্য খ্যাতি ছিল। নদীয়া জেলার আন্দুলিয়ার পল্লী পরিবেশে আমৃত্যু গঠনমূলক কাজে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্ৰামী ও দীর্ঘদিন বীরভূমে গঠনমূলক কাজে সক্রিয় মিহিরলাল (১৮৯৯—২৮-১২-১৯৮৬) তাঁর অনুজ।
Leave a Reply