বাসুদেব সার্বভৌম (আনু. ১৪২০/৩০ – ১৫৪০?) নদীয়া। নরহরি বিশারদ। বঙ্গদেশে নব্যন্যায়ের প্রথম প্রবর্তকরূপেই তাঁর নাম প্ৰসিদ্ধি লাভ করায় তাঁর রচিত বেদান্তাদি শাস্ত্ৰবিষয়ক গ্ৰন্থসমূহ বিলুপ্ত হয়েছে। পিতার নিকটই তিনি নব্যন্যায় অধ্যয়ন করেছিলেন, অধ্যয়নের জন্য মিথিলায় যান নি। তাঁর সময় পর্যন্ত বঙ্গদেশে নিরবচ্ছিন্ন নৈয়ায়িকের উদ্ভব হয় নি। তিনি স্বয়ং ষড়দর্শনে কৃতবিদ্য ছিলেন। নব্যন্যায়ের টীকা রচনা করলেও বেদান্তেই তাঁর স্বাভাবিক অনুরাগ ছিল। পুরীর শঙ্করমঠে বেদান্ত-প্রকরণ অদ্বৈতমকরন্দের ওপর সার্বভৌম-রচিত অতি দুর্লভ টীকা-গ্রন্থটি রাজেন্দ্রলাল মিত্র আবিষ্কার করে তাঁর বিবরণ মুদ্রিত করেছিলেন। নবদ্বীপে অবস্থানকালে ১৪৬০–৮০ খ্রী. মধ্যে তিনি তত্ত্বচিন্তামণির টীকা রচনা করেন। মহাপ্রভুর জন্মকালে (১৪৮৬) নবদ্বীপে ‘রাজভয়’ উপস্থিত হলে তিনি নবদ্বীপ ছেড়ে পুরীধামে যান। রাজভয় ছাড়াও শিষ্য রঘুনাথ শিরোমণির অতুলনীয় প্রতিভার স্মৃর্তি তাঁর নবদ্বীপ ত্যাগের অপর কারণ হতে পারে। উৎকলাধিপতি পুরুষোত্তমদেব ও প্রতাপরুদ্রদেবের তিনি সভাপণ্ডিত ছিলেন (১৪৬৫–১৫৩২)। ১৫৩২ খ্রী. পুরী ত্যাগ করে বারাণসীতে যান এবং শেষ-জীবন সেখানেই যাপন করেন। তাঁর টীকা-গ্রন্থের নাম সম্ভবতঃ ‘অনুমানমণিপরীক্ষা’। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে মণিটীকাকারদের মধ্যে তাঁর এই টীকাই সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়। পুরীতে প্ৰেমবিহ্বল চৈতন্যদেবের সান্নিধ্যে এসে তিনি চৈতন্যভক্ত হয়ে পড়েন। নব্যান্যায়ের গ্ৰন্থকার হিসাবে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র জলেশ্বর বাহিনীপতি মহাপাত্র ভট্টাচার্য ও পৌত্র স্বপ্নেশ্বরাচার্যের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে রঘুনাথ শিরোমণি ছাড়াও ছিলেন ‘অনুমানমণিব্যাখ্যা’ প্রণেতা কণাদ, রঘুনন্দ ভট্টাচার্য, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, শ্ৰীচৈতন্য প্রভৃতি।
পূর্ববর্তী:
« বাসুদেব দাশগুপ্ত
« বাসুদেব দাশগুপ্ত
পরবর্তী:
বিকাশ রায় »
বিকাশ রায় »
Leave a Reply