বারীন্দ্ৰকুমার ঘোষ (৫-১-১৮৮০ – ১৮-৪-১৯৫৯)। জন্ম লন্ডনের উপকণ্ঠে ক্রয়ডনে। ডাঃ কৃষ্ণধন। মাতামহ রাজনারায়ণ বসু। ১ বছর বয়সে মা ও দিদির সঙ্গে ভারতে আসেন। দেওঘর বিদ্যালয় থেকে ১৯০১ খ্রী. প্ৰবেশিকা পাশ করেন। পাটনা কলেজে ছয় মাস এফ.এ. পড়ার পর ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এর কিছুকাল পরে পাটনা কলেজের কাছে একটি চায়ের দোকান খোলেন। ব্যবসায়ে মূলধনের আশায় বরোদায় অগ্রজ অরবিন্দের কাছে যান ও বিপ্লবী আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট হন। এখানে বিষ্ণুভাস্কর লেলের কাছে যোগসাধনার নির্দেশ নেন এবং নর্মদা অঞ্চলের শাখারিয়া স্বামীর কাছে শক্তিমন্ত্রে দীক্ষাগ্ৰহণ করেন। ১৯০২ খ্রী. অরবিন্দের প্রভাবে গুপ্ত বিপ্লবীদল সংগঠনের জন্য কলিকাতায় আসেন। কিন্তু প্রথম থেকেই নেতৃত্বের জন্য প্রধান সংগঠক যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (নিরালম্ব স্বামী) সঙ্গে বিরোধিত হয়। অরবিন্দের প্রভাবে সাময়িক সমঝোতা হলেও ১৯০৬ খ্ৰী. যতীন্দ্রমোহনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করতে সক্ষম হন। ১৯০২/৩ খ্রী. নাগাদ ফরাসী চন্দননগরের মধ্য দিয়ে অস্ত্ৰ আমদানির চেষ্টা করেন। ওড়িশা ও আসামে ভ্ৰমণ করে সংগঠন গড়ার জন্য ঘাঁটি তৈরি করার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন। পূর্ববঙ্গের ছোটলাট ব্যামফীল্ড ফুলারকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কিংসফোর্ড হত্যার জন্য ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীকে মজঃফরপুরে পাঠান। ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ও অবিনাশ ভট্টাচার্যের সহযোগিতায় ১৯০৬ খ্ৰী. বিপ্লবীদের পত্রিকা ‘যুগান্তর’ প্রতিষ্ঠা করে এক বছর নিজ তত্ত্বাবধানে চালান। বিখ্যাত মুরারিপুকুর বাগানবাড়ি তাঁর পরিকল্পনায় বোমা তৈরির কারখানারূপে ব্যবহৃত হত। কিন্তু পুলিস সচেতন হয়ে তাঁর দলকে ২-৬-১৯০৮ খ্রী. গ্রেপ্তার করতেই তিনি নিজে স্বীকারোক্তি করেন এবং অন্যান্য সহকর্মীদেরও স্বীকারোক্তি দিতে প্ররোচিত করেন। যুক্তি ছিল দেশবাসীকে বিপ্লব-প্রচেষ্টার কথা জানানো এবং এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘My mission is over’। দলের একমাত্র হেমচন্দ্ৰ কানুনগো স্বীকারোক্তি দেন নি। বিচারে প্ৰথমে প্ৰাণদণ্ডাদেশ এবং পরে আপীলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১৯০৯ খ্রী. থেকে ডিসেম্বর ১৯২০ খ্রী. অবধি কারারুদ্ধ ছিলেন। মুক্তির পর মাঝে কিছুদিন পণ্ডিচেরীতে অরবিন্দ আশ্রমে থাকেন এবং বিখ্যাত ‘বিজলী’ পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। ১৯৩৩ খ্রী. ‘দি ডন অফ ইন্ডিয়া’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ১৯০৫ খ্রী. ভারতের রাজনৈতিক মুক্তির উপায় স্বরূপ যিনি দেশে বোমা ও সস্ত্ৰাসবাদের প্রবর্তন করেছিলেন সেই ‘বোমারু বারীন্দ্ৰকুমার’, ১৯৩৬ খ্রী তাঁর ‘ভারত কোন পথে’ পুস্তিকাতে এই কাজের নিন্দা করে লিখেছেন—’ভারত ও বৃটেন দুই দেশের মিলন যখন বিধির বিধানে হয়েছে তখন বৃটেনকেই করতে হবে আমাদের মন্ত্রগুরু’। প্রৌঢ় বয়সে বিবাহ করেন। শেষ-বয়সে ১৯৫০ খ্ৰী. থেকে ‘দৈনিক বসুমতী’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক রামানন্দ লেকচারার নিযুক্ত হয়ে ‘মানবাধিকার ও তাহার ক্রমবিকাশ’ শীর্ষক প্ৰবন্ধমালায় তিনি তাঁর অভিনব চিন্তাধারার পরিচয় দিয়েছেন। ‘দ্বীপান্তরের বাঁশি’, ‘পথের ইঙ্গিত’, ‘আমার আত্মকথা’, ‘অগ্নিযুগ’, ‘ঋষি রাজনারায়ণ’, The Tale of My Exile’, ‘Sri Aurobindo’ প্রভৃতি তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
পূর্ববর্তী:
« বারী সিদ্দিকী
« বারী সিদ্দিকী
পরবর্তী:
বালা শহীদ সাহেব »
বালা শহীদ সাহেব »
Leave a Reply