বঙ্কিমচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায় (২৬-৬-১৮৩৮ – ৮-৪-১৮৯৪) কাঁঠালপাড়া-চব্বিশ পরগনা। যাদবচন্দ্র। সাহিত্যস্রষ্টা ঔপন্যাসিক, ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্রের উদগাতা এবং বাঙলার ‘নবজাগরণ যুগের’ অন্যতম প্রধান পুরুষ।
ছ’বছর বয়সে পিতারকর্মস্থল মেদিনীপুরে গিয়ে ইংরেজী স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৪৯ খ্রী. কাঁঠালপাড়ায় ফেরেন। হুগলী কলেজের বিভিন্ন বৃত্তি পরীক্ষায়, প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৫৬ খ্রী. আইন পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। পরের বছর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখান থেকে প্ৰবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ১৮৫৮ খ্রী. বি-এ পরীক্ষা প্রবর্তিত হলে ১৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র যদুনাথ বসু ও বঙ্কিমচন্দ্ৰ দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। আইন অধ্যয়ন শেষ হওয়ার পূর্বেই সরকার তাকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর নিযুক্ত করেন। ১৮৬৯ খ্রী. আইন পরীক্ষা পাশ করেন। একাদিক্ৰমে ৩৩ বছর সরকারী পদে অধিষ্ঠিত থেকে ১৪-৯-১৮৯১ খ্রী. অবসর গ্ৰহণ করেন।
১৮৫৩ খ্রী. হুগলী কলেজে ছাত্র-জীবনে ‘সংবাদ প্রভাকরে’ কবিতা প্ৰতিযোগিতায় তাঁর ‘কামিনীর উক্তি’ কবিতাটি পুরস্কৃত হয়। হাকিমরূপে দেশের মানুষ ও তাদের দুঃখ-বেদনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হন। প্ৰবল দেশপ্রেম ও ভারতীয়দের ইংরেজদের সঙ্গে সমদৰ্শিতার জন্য কাৰ্যক্ষেত্রে উন্নতি হয় নি। চাকরি জীবনেই দীনবন্ধু মিত্রের সঙ্গে পরিচয় ও গভীর বন্ধুত্ব হয়। ইংরেজীতে রচিত কিশোরীচাঁদ মিত্র সম্পাদিত ‘ইন্ডিয়ান ফিল্ড’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত ‘Rajmohan’s wife’ (১৮৬৪) তাঁর প্রথম উপন্যাস। ‘দুর্গেশনন্দিনী’ প্রকাশিত হয় ১৮৬৫ খ্ৰী।
তাঁর তিনটি উপন্যাস- ‘দুৰ্গেশনন্দিনী’, ‘কপালকুন্ডলা’ ও ‘মৃণালিনী’ প্ৰকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইংরেজী-শিক্ষিত মহলে বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যের দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় তাঁর কর্মস্থল ছিল বহরমপুর। ‘On origin of Hindu Festival’, ‘Bengali Literature’ ইত্যাদি প্রবন্ধ লিখে স্বদেশ, সমাজ ও সংস্কৃতিতে গভীর জ্ঞান ও উৎসাহের পরিচয় দেন। ১৮৭২ খ্রী. প্ৰথম প্ৰকাশিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী সাহিত্যগোষ্ঠী গড়ে ওঠে। তিনি চার বছর এই পত্রিকার সম্পাদনা করেন। পত্রিকাটি প্রথমে কলিকাতায় ও পরে কাঁঠালপাড়ার পৈতৃকভবনে মুদ্রাযন্ত্র স্থাপন করে চালাতেন। বাঙলার সমাজ ও সাহিত্যজীবনে এই পত্রিকার প্রভাব সম্পর্কে রবীন্দ্ৰনাথ বলেন, ‘বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন আসিয়া বাঙ্গালীর হৃদয় একেবারে লুঠ করিয়া লইল’। বঙ্গদর্শনে বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, কাব্য, সমাজতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, অর্থনীতি, সঙ্গীত, ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতি যাবতীয় বিষয়ে আলোচনা প্রকাশিত হত। এই সময়ে দেশপ্রেমে উদ্দীপিত তাঁর উপন্যাস ‘রাজসিংহ’, ‘আনন্দমঠ’, ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘সীতারাম’ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। পাদরী হেস্টী ও কৃষ্ণমোহনের হিন্দুধর্মের সমালোচনার জবাবে ‘রামচন্দ্র’ ছন্দনামে ‘Letters on Hinduism’ লেখেন। কিছু পরে ‘কৃষ্ণচরিত্র’ প্ৰকাশিত হয়।
১৮৭৩ খ্রী. পাবনা সিরাজগঞ্জের প্রজাবিদ্রোহের পূর্বে ‘বঙ্গদেশের কৃষক’ নামে ধারাবাহিক প্রবন্ধের মাধ্যমে ভূমি-সমস্যা ও কৃষক সম্বন্ধে আলোচনা করেন। ‘সাম্য’ প্রবন্ধেও তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেন। ‘বঙ্গদর্শনে’ প্ৰকাশিত ‘কমলাকান্তের দপ্তর’-এর বহু নিবন্ধে তাঁর স্বদেশচিন্তা প্ৰকাশ পেতে থাকে। ‘আনন্দমঠ’ প্রকাশিত হবার পূর্বেই ১৮৭৫ খ্ৰী ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীত রচনা করেন। ভারত-সভা ও তৎসৃষ্ট রাষ্ট্ৰীয় আন্দোলনে তাঁর সহানুভূতি ছিল। প্ৰায় ৩০ বছর বয়সের সময় যদুভট্টের কাছে গান শেখেন। ১৮৯১ খ্রী. অবসর নিয়ে কলিকাতায় বাস করতে থাকেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুরুদ্ধ হয়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য Bengali Selection প্ৰকাশ করেন। এর অনেক আগে ১৮৮৫ খ্রী. সেনেটের সভ্য হন।
উপন্যাস ভিন্ন তাঁর অন্যান্য রচনাবলী : ‘ললিতা’, ‘লোকরহস্য’, ‘বিজ্ঞানরহস্য’, ‘বিবিধ সমালোচনা’, ‘দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী’, ‘কবিতা পুস্তক’, ‘প্ৰবন্ধ পুস্তক’, ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’, ‘বিবিধ প্রবন্ধ’, ‘ধর্মতত্ত্ব’, ‘সহজ রচনা শিক্ষা’, ‘সহজ ইংরেজী শিক্ষা’, ‘শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা’ প্রভৃতি। রচিত উপন্যাসের সংখ্যা ১৪ টি। ‘আনন্দমঠে’র আদর্শ অনেক পরে বাঙালী তথা ভারতীয় বিপ্লবীদের প্রেরণা যুগিয়েছে। ‘ঋষি বঙ্কিম’ বাঙালীদের দেওয়া তাঁর সার্থক উপাধি।
বঙ্কিমচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায় (২৬-৬-১৮৩৮ – ৮-৪-১৮৯৪) কাঁঠালপাড়া-চব্বিশ পরগনা। যাদবচন্দ্র। সাহিত্যস্রষ্টা ঔপন্যাসিক, ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্রের উদগাতা এবং বাঙলার ‘নবজাগরণ যুগের’ অন্যতম প্রধান পুরুষ।
ছ’বছর বয়সে পিতারকর্মস্থল মেদিনীপুরে গিয়ে ইংরেজী স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৪৯ খ্রী. কাঁঠালপাড়ায় ফেরেন। হুগলী কলেজের বিভিন্ন বৃত্তি পরীক্ষায়, প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৫৬ খ্রী. আইন পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। পরের বছর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখান থেকে প্ৰবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ১৮৫৮ খ্রী. বি-এ পরীক্ষা প্রবর্তিত হলে ১৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র যদুনাথ বসু ও বঙ্কিমচন্দ্ৰ দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। আইন অধ্যয়ন শেষ হওয়ার পূর্বেই সরকার তাকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর নিযুক্ত করেন। ১৮৬৯ খ্রী. আইন পরীক্ষা পাশ করেন। একাদিক্ৰমে ৩৩ বছর সরকারী পদে অধিষ্ঠিত থেকে ১৪-৯-১৮৯১ খ্রী. অবসর গ্ৰহণ করেন।
১৮৫৩ খ্রী. হুগলী কলেজে ছাত্র-জীবনে ‘সংবাদ প্রভাকরে’ কবিতা প্ৰতিযোগিতায় তাঁর ‘কামিনীর উক্তি’ কবিতাটি পুরস্কৃত হয়। হাকিমরূপে দেশের মানুষ ও তাদের দুঃখ-বেদনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হন। প্ৰবল দেশপ্রেম ও ভারতীয়দের ইংরেজদের সঙ্গে সমদৰ্শিতার জন্য কাৰ্যক্ষেত্রে উন্নতি হয় নি। চাকরি জীবনেই দীনবন্ধু মিত্রের সঙ্গে পরিচয় ও গভীর বন্ধুত্ব হয়। ইংরেজীতে রচিত কিশোরীচাঁদ মিত্র সম্পাদিত ‘ইন্ডিয়ান ফিল্ড’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত ‘Rajmohan’s wife’ (১৮৬৪) তাঁর প্রথম উপন্যাস। ‘দুর্গেশনন্দিনী’ প্রকাশিত হয় ১৮৬৫ খ্ৰী।
তাঁর তিনটি উপন্যাস- ‘দুৰ্গেশনন্দিনী’, ‘কপালকুন্ডলা’ ও ‘মৃণালিনী’ প্ৰকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইংরেজী-শিক্ষিত মহলে বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যের দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় তাঁর কর্মস্থল ছিল বহরমপুর। ‘On origin of Hindu Festival’, ‘Bengali Literature’ ইত্যাদি প্রবন্ধ লিখে স্বদেশ, সমাজ ও সংস্কৃতিতে গভীর জ্ঞান ও উৎসাহের পরিচয় দেন। ১৮৭২ খ্রী. প্ৰথম প্ৰকাশিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী সাহিত্যগোষ্ঠী গড়ে ওঠে। তিনি চার বছর এই পত্রিকার সম্পাদনা করেন। পত্রিকাটি প্রথমে কলিকাতায় ও পরে কাঁঠালপাড়ার পৈতৃকভবনে মুদ্রাযন্ত্র স্থাপন করে চালাতেন। বাঙলার সমাজ ও সাহিত্যজীবনে এই পত্রিকার প্রভাব সম্পর্কে রবীন্দ্ৰনাথ বলেন, ‘বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন আসিয়া বাঙ্গালীর হৃদয় একেবারে লুঠ করিয়া লইল’। বঙ্গদর্শনে বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, কাব্য, সমাজতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, অর্থনীতি, সঙ্গীত, ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতি যাবতীয় বিষয়ে আলোচনা প্রকাশিত হত। এই সময়ে দেশপ্রেমে উদ্দীপিত তাঁর উপন্যাস ‘রাজসিংহ’, ‘আনন্দমঠ’, ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘সীতারাম’ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। পাদরী হেস্টী ও কৃষ্ণমোহনের হিন্দুধর্মের সমালোচনার জবাবে ‘রামচন্দ্র’ ছন্দনামে ‘Letters on Hinduism’ লেখেন। কিছু পরে ‘কৃষ্ণচরিত্র’ প্ৰকাশিত হয়।
১৮৭৩ খ্রী. পাবনা সিরাজগঞ্জের প্রজাবিদ্রোহের পূর্বে ‘বঙ্গদেশের কৃষক’ নামে ধারাবাহিক প্রবন্ধের মাধ্যমে ভূমি-সমস্যা ও কৃষক সম্বন্ধে আলোচনা করেন। ‘সাম্য’ প্রবন্ধেও তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেন। ‘বঙ্গদর্শনে’ প্ৰকাশিত ‘কমলাকান্তের দপ্তর’-এর বহু নিবন্ধে তাঁর স্বদেশচিন্তা প্ৰকাশ পেতে থাকে। ‘আনন্দমঠ’ প্রকাশিত হবার পূর্বেই ১৮৭৫ খ্ৰী ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীত রচনা করেন। ভারত-সভা ও তৎসৃষ্ট রাষ্ট্ৰীয় আন্দোলনে তাঁর সহানুভূতি ছিল। প্ৰায় ৩০ বছর বয়সের সময় যদুভট্টের কাছে গান শেখেন। ১৮৯১ খ্রী. অবসর নিয়ে কলিকাতায় বাস করতে থাকেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুরুদ্ধ হয়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য Bengali Selection প্ৰকাশ করেন। এর অনেক আগে ১৮৮৫ খ্রী. সেনেটের সভ্য হন।
উপন্যাস ভিন্ন তাঁর অন্যান্য রচনাবলী : ‘ললিতা’, ‘লোকরহস্য’, ‘বিজ্ঞানরহস্য’, ‘বিবিধ সমালোচনা’, ‘দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী’, ‘কবিতা পুস্তক’, ‘প্ৰবন্ধ পুস্তক’, ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’, ‘বিবিধ প্রবন্ধ’, ‘ধর্মতত্ত্ব’, ‘সহজ রচনা শিক্ষা’, ‘সহজ ইংরেজী শিক্ষা’, ‘শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা’ প্রভৃতি। রচিত উপন্যাসের সংখ্যা ১৪ টি। ‘আনন্দমঠে’র আদর্শ অনেক পরে বাঙালী তথা ভারতীয় বিপ্লবীদের প্রেরণা যুগিয়েছে। ‘ঋষি বঙ্কিম’ বাঙালীদের দেওয়া তাঁর সার্থক উপাধি।
Leave a Reply