ফজলুল হক, আবুল কাসেম, শের-এ বঙ্গাল (২৬-১০-১৮৭৩ – ২৭-৪-১৯৬২) চাখার—বরিশাল। আইনজীবী কাজী ওয়াজেদ আলী। অবিভক্ত বাঙলার ও পূর্ব-পাকিস্তানের অন্যতম অবিসংবাদিত জননেতা।
১৮৮৯ খ্রী. বরিশাল জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে এফ.এ, রসায়ন, পদার্থ ও গণিতে অনার্সসহ বি-এ, ১৮৯৫ খ্রী. গণিতে এম.এ. ও ১৮৯৭ খ্রী. ল পাশ করেন। ওকালতিতে কিছুদিন শিক্ষানবীশী করার পর ১৯০০ খ্রী. থেকে বরিশালে স্বাধীনভাবে আইন ব্যবসায় শুরু করেন। ১৯০১ খ্ৰী মহাত্মা অশ্বিনিকুমার দত্তের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটার ফলে বরিশাল শহর মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে এবং বাখরগঞ্জ জেলা বোর্ডের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ১৯০৫ খ্ৰী. ঢাকায় মুসলমান রাজনৈতিক সম্মেলনে যোগদান করেন ও ঢাকার নবাবের নির্দেশে বোম্বাইতে মহম্মদ আলী জিন্নার সঙ্গে পরিচিত হন। এই বছরই ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ জন্মলাভ করে।
১৯০৬ খ্ৰী. পূর্ববঙ্গের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের পদ গ্ৰহণ করেন। সমবায় বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রারের পদে ছিলেন। ১৯১১ খ্রী. রেজিস্ট্রারের পদ না পেয়ে সরকারী চাকরি ত্যাগ করে কলিকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতে থাকেন এবং এক বছরেই খ্যাতিমান হন। ১৯১৩ খ্রী. বঙ্গীয় প্ৰাদেশিক মুসলিম লীগের সেক্রেটারী ও নিখিল ভারত মুসলিম লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারীপদ লাভ করেন। সুবক্তা হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছিল। ১৯১৬ খ্রী. কলিকাতায় টেইলর ও কারমাইকেল ছাত্রাবাস স্থাপন করেন। লক্ষ্ণৌতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের যুক্ত অধিবেশনে যোগ দেন। ১৯১৭ খ্রী. ভারতীয় প্রেস অ্যাক্টের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন। ১৯১৮ খ্রী.নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি ও নিখিল ভারত কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারী হন। ১৯১৯ খ্রী. রাউলাট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে কলেজ স্কোয়ারের সভায় সভাপতিত্ব করেন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের কংগ্রেস-নিয়োজিত তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯২০ খ্ৰী. দেশবন্ধুর শিক্ষা-বয়কট নীতির বিরোধিতা করেন। ১৯২১ খ্রী. নজরুল ইসলাম ও মুজফফর আহমেদের সঙ্গে ‘নবযুগ’ পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। ১৯২৪ খ্রী. কয়েকমাসের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর পদে বৃত হন। ১৯২৬ খ্রী. কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং ঢাকায় প্রজা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯২৭ খ্ৰী. বঙ্গীয় কৃষক-প্ৰজা পার্টি স্থাপন করেন ও তাঁর সভাপতি হন। ১৯২৮ – ২৯ খ্রী. মুসলিম লীগ পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন। ১৯৩০ – ৩১ খ্রী গোলটেবিল বৈঠকের অন্যতম প্ৰতিনিধি ছিলেন। ১৯৩৫ খ্ৰী. জিন্না সাহেব বিলাত থেকে ফিরে হক সাহেবকে বাদ দিয়ে লীগের কাজ চালাবার চেষ্টা করেন। এই বছর কলিকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলেও বিপক্ষে দলের চেষ্টায় গদিচ্যুত হন। ১৯৩৭ খ্রী. বিনা প্ৰতিদ্বন্দ্বিতায় কেন্দ্রীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত এবং পুনরায় মেয়র হন। এই নির্বাচনে কৃষক-প্ৰজাদল এবং মুসলিম লীগ প্ৰায় সমান সমান আসন পেলেও হক সাহেবের প্রধানমন্ত্রিত্বে বাঙলায় কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। তিনি ঋণ সালিশী বোর্ড গঠন করেছিলেন। ১৯৩৮ খ্রী. বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি হন ও সংগঠনের কাজে সারা ভারত ভ্ৰমণ করেন। মার্চ ১৯৪০ খ্রী. ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভায় উত্থাপন করেন ও পাশ করান। ১৯৪১ খ্ৰী. জিন্নার সঙ্গে বিরোধ শুরু হলে লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ফলে বাঙলায় কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার পতন ঘটে ও হক সাহেব ড, শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জীর সঙ্গে প্ৰগেসিভ কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। ক্রমে যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্রিটিশ আমলা কর্তৃক ‘পোড়ামাটি নীতি’ গ্রহণের ফলে গভর্নর হাবার্টের সঙ্গে তাঁর পত্র-যুদ্ধ আরম্ভ হয়। ৯-১-১৯৪৩ খ্রী. ‘ভারত-ছাড়’ আন্দোলনে পুলিসী অত্যাচারের তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন। ২৮-৩-১৯৪৩ খ্রী. হার্বাট কর্তৃক পদচ্যুত হন। ১৯৪৭ খ্রী. দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকায় ওকালতি করতেন। ৪-১২-১৯৫৩ খ্ৰী. পূর্ব-পাকিস্তান যুক্তফ্রন্ট সরকারের একজন দলনেতা হন। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়ী হলে তিনি পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু সাতান্ন দিন পরে সেই মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং সেখানে গভর্নরের শাসন প্রবর্তিত হয়। আরও কয়েকটি ভাঙ্গা-গড়ার পর তিনি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন এবং একটি শাসনতন্ত্র তৈরী করেন। ২৩-৩-১৯৫৬ খ্রী. পাকিস্তান প্রজাতন্ত্ররূপে ঘোষিত হবার পূর্বেই তিনি। পূর্ববঙ্গের গভর্নর নিযুক্ত হয়ে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। এই পদে তিনি ১-৪-১৯৫৮ খ্রী. পর্যন্ত ছিলেন। স্বগ্রামে তিনি একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
Leave a Reply