প্রিয়ম্বদা দেবী ১ — কোটালিপাড়া-ফরিদপুর। শিবরাম সার্বভৌম। সম্ভবত ১৬শ শতাব্দীর শেষভাগে জন্ম। স্বামী পশ্চিমদেশীয় পণ্ডিত রঘুনাথ মিশ্র। ধনী পিতা কন্যাকে ভূসম্পত্তি দিয়ে ‘মাঝবাড়ী’ গ্রামে স্থিত করেন। পিতারযত্ন ও শিক্ষাগুণে প্ৰতিভাশালী প্ৰিয়ম্বদা কাব্যে, সাহিত্যে ও ব্যাকরণে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করেন। বালিকা বয়স থেকেই সংস্কৃত ভাষায় যেমন অনর্গল কথা বলতে পারতেন তেমনি কবিতা রচনায় পারদর্শিনী ছিলেন। কুলদেবতা শ্ৰীগোবিন্দদেবের উদ্দেশ্যে তাঁর রচিত সংস্কৃত কবিতাটি ইংরেজীতেও অনূদিত হয়েছে। তিনি ‘শ্যামারহস্য’ নামে তন্ত্রগ্রন্থ, ‘মদালসা’ উপাখ্যানের দার্শনিক টীকা এবং মহাভারতের মোক্ষধর্মের একটি সুবিস্তৃত টীকা প্রণয়ন করেছিলেন।
প্রিয়ম্বদা দেবী ২ (১৮৭১ – ১৯৩৫) জন্ম-মাতামহের কর্মক্ষেত্র গুনাইগাছা-পাবনা। কৃষ্ণকুমার বাগচী। মায়ের সঙ্গে মাতুলালয়েই তাঁর জীবন কেটেছে। মাতা প্ৰসন্নময়ী সুলেখিকা ছিলেন। আশুতোষ চৌধুরী ও প্রমথ চৌধুরী তাঁর মাতুল। ১৮৮৮ খ্রী. বেথুন স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং বেথুন কলেজ থেকে এফ.এ. ও ১৮৯২ খ্ৰী. বি.এ. পাশ করেন। ঐ বছরই মধ্যপ্রদেশের রায়পুরের আইনজীবী তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৮৯৫ খ্রী.বিধবা হন এবং ১৯০৬ খ্রী. একমাত্র পুত্র মারা গেলে সমাজসেবা এবং কাব্যচর্চাকে জীবনের অঙ্গ করেন। তিনি দুঃখবাদী কবি। কাব্য-রচনায় রবীন্দ্রনাথের সহযোগিতা লাভ করেছিলেন। নারীশিক্ষা প্রচলনের জন্য তিনি একাধিক মহিলা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত এবং দীর্ঘকাল ভারত-স্ত্রী-মহামন্ডলের কর্মধ্যক্ষা ছিলেন। ১৯১৫ খ্রী. ব্ৰাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। নানা পত্রপত্রিকায় বহু কবিতা, অনুবাদ ও নানা ধরনের লেখা লিখেছেন। তাঁর ভাস রচিত ‘স্বপ্নবাসবদত্তা’র অনুবাদ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ‘ভক্তবাণী’ নাম দিয়ে বাইবেলের বেশ কিছু অংশ অনুবাদ করেছিলেন। জাপানের গেইশা রমণীদের জীবন নিয়ে তাঁর লেখা বড় গল্প ‘রেণুকা’। রচিত কাব্যগ্রন্থ: ‘রেণু’, ‘তারা’, ‘পত্ৰলেখা’, ‘অংশু’, ‘চম্পা ও পাটল’। অন্যান্য গ্রন্থ : ‘অনাথ’, ‘পঞ্চুলাল’, ‘কথা ও উপকথা’ প্রভৃতি।
Leave a Reply