প্রিয়দারঞ্জন রায় (১৬-১-১৮৮৮ – ১১-১২-১৯৮২) নোয়াপাড়া-চট্টগ্রাম। পিতা কালীচরণ জমিদার ও উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক। প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৯০৮ খ্ৰী. রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় অনার্স সহ বি-এ, এবং ১৯১১ খ্রী. রসায়নশাস্ত্ৰে প্ৰথম শ্রেণীতে প্ৰথম হয়ে এম-এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর প্রেসিডেন্সী কলেজে আচার্য প্ৰফুল্লচন্দ্রের গবেষণাগারে অজৈব রসায়নে কাজ করতে আরম্ভ করেন। ১৯১২ খ্রী. গবেষণাগারে এক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেলে দুবছর গবেষণার কাজ করতে পারেন নি। ১৯১৪–১৮ খ্রী. সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। সেখান থেকে তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান কলেজে আচার্য প্ৰফুল্লচন্দ্রের সহকারী হিসাবে ১৯১৮ খ্রী. নিযুক্ত হন। ১৯২৬ খ্রী. রুবিয়ানিক অ্যাসিড সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার জন্য খ্যাতি লাভ করেন। ১৯২৯ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষ ট্র্যাভেলিং ফেলোশিপ নিয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হয়ে বিদেশে যান। সুইজারল্যান্ডের বাৰ্ণে এবং অস্ট্রিয়ার গ্রাজে। বিখ্যাত অধ্যাপকদের গবেষণাগারে কাজ করে ১৯৩০ খ্ৰী. দেশে ফিরে আসেন। ১৯৩২ খ্রী. ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের রসায়ন শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর বহু মূল্যবান গবেষণা রসায়নশাস্ত্রের প্রামাণিক গ্ৰন্থসমূহে স্থানলাভ করেছে। ১৯৩২ খ্রী. ‘Chemische Analyse’ নামে একটি প্রামাণিক গ্রন্থের সহযোগী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৩৭ খ্রী. বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের খয়রা অধ্যাপক এবং রসায়ন বিভাগে পালিত অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হয়ে ১৯৫২ খ্রী. অবসর গ্রহণ করেন। অজৈব রসায়নে তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। জটিল যৌগ নিয়ে, বিশেষ করে জটিল যৌগের গঠন নির্ণয়ে চৌম্বিক ধর্মের প্রয়োগ সংক্রান্ত তাঁর গবেষণা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অবসর গ্রহণের পর তিনি ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অব সায়েন্সের অবৈতনিক অধ্যাপক ও পরে ডঃ মেঘনাদ সাহার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর হয়ে ১৯৫৮ খ্রী. পর্যন্ত ঐ পদে থাকেন। ১৯৩৫ খ্রী. ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের (বর্তমান ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৪৭ খ্রী. ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ও ১৯৫৮ – ৫৯ খ্রী. ইণ্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। পদার্থবিদ্যা, শারীরবিদ্যা প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়ও তাঁর যথেষ্ট পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি প্ৰাচীন ভারতে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ক গ্রন্থের সম্পাদনা করেছেন। ইংরেজী বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতেন। তাঁর একটি জনপ্রিয় গ্ৰন্থ ‘অতিকায় অণুর বিচিত্ৰ কাহিনী’। সংস্কৃত সাহিত্য ও দর্শনেও তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। সমাজ কল্যাণমূলক ও পল্লী উন্নয়নের কাজেও আত্মনিয়োগ করেছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« প্রিয়কুমার চট্টোপাধ্যায়
« প্রিয়কুমার চট্টোপাধ্যায়
পরবর্তী:
প্রিয়নাথ কর »
প্রিয়নাথ কর »
Leave a Reply