প্রমোদরঞ্জন সেনগুপ্ত (১৯০৭ – ১৯৭৪) দুমকার নাম-করা ডাক্তার হর্ষনাথ। ১৯২৫ খ্রী. কৃষ্ণনগর কলেজে পড়ার সময় অনন্তহরি মিত্র, মহাদেব সরকার, হেমন্ত সরকার প্রমুখ বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন। দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলায় ধরা পড়ে ফরিদপুরের শিবচর গ্রামে অন্তরীণ থাকা-কালে বি.এ. পাশ করেন। মুক্তি পাবার পর ১৯২৭ খ্রী. বিলাত যান। সেখানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে কিছুদিন লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স-এ পড়াশুনা করেন। ঐ সময় থেকেই লন্ডনে ডক শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনে ও ইন্ডিয়া লীগের কাজে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ১৯২৮ খ্ৰী সৌম্যেন্দ্ৰনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে জার্মানিতে গিয়ে বার্লিন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পরিচিত হন। সেখান থেকে ইংল্যান্ড ফেরার পথে ফরাসী পুলিসের হাতে রিভলভার সহ ধরা পড়ে কিছুদিন আটক থাকেন। ইংল্যান্ডে বিখ্যাত সাম্যবাদী নেতা সপুরজী সাকলাৎওয়া, হ্যারি পলিটি, রজনীপাম দত্ত প্ৰমুখের সঙ্গে তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। ১৯৩৩ খ্রী. বিলাতে হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেন। প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর পড়াশুনা করেন। ১৯৩৮ খ্ৰী. ‘ভারতে কৃষি সংশ্লিষ্ট অবস্থার বিকাশ’ বিষয়ে ডক্টরেটের নিবন্ধ পেশ করেন। এই সময়ে স্পেনে ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কোর অভিযানের বিরুদ্ধে প্রকাতন্ত্রী সরকারকে সমর্থন জানাতে স্পেনে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে সুভাষচন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় বার্লিনে যে ‘আই.এন.এ.’ দল গড়ে ওঠে তিনি তাঁর প্রচার-অধিকর্তা হিসাবে কাজ করেন এবং কিছুদিন ‘আজাদ হিন্দ’ পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। যুদ্ধশেষে জুন ১৯৪৫ খ্ৰী. ব্রিটিশ মিলিটারী মিশনের হাতে ধরা পড়ে ১০ মাস বন্দীদশায় কাটান। ১৯৪৬ খ্রী. দেশে ফেরেন এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন। ১৯৫০ খ্ৰী. কলিকাতা প্রেসিডেন্সী জেলে কারারুদ্ধ ছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। বিশ্বশান্তি সম্মেলন ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা, এদেশে রম্যা রলা সোসাইটির সম্পাদক এবং নক্সালবাড়ি কৃষক সংগ্রাম সহায়ক কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বহু প্ৰবন্ধ প্ৰকাশ করেছেন। রচিত গ্ৰন্থ : ‘ভারতীয় মহাবিদ্ৰোহ’, ‘নীলবিদ্রোহ ও তৎকালীন বাঙ্গালী সমাজ’, ‘কালান্তরের পথিক রম্যা রলা’ প্রভৃতি।
পূর্ববর্তী:
« প্রমোদরঞ্জন ভড়
« প্রমোদরঞ্জন ভড়
পরবর্তী:
প্রসন্নচন্দ্র ন্যায়রত্ন »
প্রসন্নচন্দ্র ন্যায়রত্ন »
Leave a Reply