প্ৰফুল্লচন্দ্র রায়, আচাৰ্য, স্যার (২-৮-১৮৬১ – ১৬-৬-১৯৪৪) রাড়ুলি-যশোহর (পরবর্তী কালে খুলনা)। হরিশ্চন্দ্র। প্রখ্যাত রসায়নবিদ, অধ্যাপক ও ভারতবর্ষে রাসায়নিক শিল্প-প্ৰতিষ্ঠানের প্রথম ভারতীয় স্থাপয়িতা। কলিকাতা অ্যালবার্ট স্কুল থেকে ১৮৭৯ খ্রী এন্ট্রান্স পাশ করে মেট্রোপলিটান ও প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়েন। বি.এ. পরীক্ষার আগে গিলক্রাইস্ট বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৮২ খ্রী. বিলাত যান। সেখানে প্রথমে বি-এস-সি পাশ করেন এবং ১৮৮৭ খ্রী. রসায়নশাস্ত্ৰে মৌলিক গবেষণার জন্য এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএস-সি. ডিগ্রি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হোপ পুরস্কার পান। ১৮৮৮ খ্রী. দেশে ফেরেন। ১৮৮৯ খ্রী. প্রেসিডেন্সী কলেজের রসায়ন বিজ্ঞানে সহকারী অধ্যাপক এবং ১৯১১ খ্রী. প্ৰধান অধ্যাপক হন। ১৯১৬ খ্রী. ঐ পদ থেকে অবসর-গ্ৰহণ করার পর সদ্য-প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান কলেজের রসায়ন বিভাগে ‘পালিত অধ্যাপক হন এবং ১৯৩৬ খ্রী. পর্যন্ত ঐ পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। অধ্যাপনার গুণে তিনি ছাত্রদের আকৃষ্ট করে একটি ভারতীয় রাসায়নিক বিজ্ঞানী গোষ্ঠীর সৃষ্টি করেন ও ভারতে রসায়নচৰ্চা এবং গবেষণার পথ উন্মুক্ত করেন। ১৯০১ খ্ৰী. স্থাপিত ভারতবর্ষের প্রথম রাসায়নিক দ্রব্য ও ঔষধ প্রস্তুতের কারখানা ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড’-এর তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। বাঙলাদেশে বিবিধ শিল্পোন্নতিবিধানের এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য-প্রসারের প্রচেষ্টায় তাঁর উৎসাহ ছিল অদম্য। ১৯২৪–৪৪ খ্ৰী. তিনি যাদবপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। ১৯২৪ খ্রী. তাঁর প্রেরণায় ও অর্থসাহায্যে ‘ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। জীবনে দেশ-বিদেশ থেকে তিনি বহু সম্মান লাভ করেছেন। চিরকুমার প্রফুল্লচন্দ্র অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে গেছেন। ছাত্র-শিষ্যদের সঙ্গে তাঁর নিবিড় প্রীতির বন্ধন ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী বীরদের প্রতি তাঁর গভীর সহানুভূতি ছিল। সর্ববিধ জাতীয় শিক্ষা ও শিল্পোদ্যোগের প্রতি অকৃপণ সহায়তা এবং মানব-কল্যাণে অর্জিত অর্থের অকাতর বিতরণ তাঁকে দেশবাসীর সামনে বিশিষ্ট করে তুলেছে। ইতিহাস, ইংরেজী ও বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুরাগ ছিল। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রবর্তনের তিনি একজন প্ৰধান উদ্যোক্তা। তাঁর রচিত আত্মচারিত ‘Life and Experiences of a Bengali Chemist’ এবং ইংরেজী ও বাংলায় লেখা বহুবিধ প্ৰবন্ধাবলী তাঁর সাহিত্য-সাধনার পরিচায়ক। বাংলায় রচিত ‘বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার’ এবং ‘অন্নসমস্যায় বাঙ্গালীর পরাজয় ও তাহার প্রতিকার’ তাঁর অন্যতম উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ। প্রেসিডেন্সী কলেজে অধ্যাপনাকালে তাঁর বিখ্যাত গ্ৰন্থ ‘History of Hindu Chemistry’ (১৯০২ ও ১৯০৯) দুই খণ্ডে রচিত হয়। ১৯২১ খ্রী. অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান্ধীজীর খদার-প্রচারে তিনি অন্যতম প্ৰধান উদ্যোক্তা ছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের সিআইই, ও নাইট উপাধি ছাড়া দেশী-বিদেশী চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্ৰী পান এবং লন্ডন ও মিউনিক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানিত সদস্যরূপে গ্ৰহণ করে। ১৯১০ খ্ৰী. রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের এবং ১৯২০ খ্রী. অনুষ্ঠিত ভারতীয় বিজ্ঞান সভার তিনি মূল সভাপতি ছিলেন। ১৯৩১ খ্ৰী. মিউনিক শহরের ‘ডয়টসে আকাদেমি’ ও ১৯৪৩ খ্রী. লন্ডন কেমিক্যাল সোসাইটি তাকে সম্মানিত সভ্যরূপে নির্বাচিত করে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শিক্ষার উন্নতিকল্পে তিনি প্রায় ২ লক্ষ টাকা দান করেন। এছাড়াও দরিদ্র ছাত্রদের অর্থসাহায্য করতেন। জাতিভেদ, বাল্যবিবাহ, পণপ্ৰথা প্রভৃতি হিন্দুসমাজের বিবিধ কুসংস্কারের বিরোধী ছিলেন। দুৰ্ভিক্ষ, বন্যা, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্ৰাকৃতিক বিপর্যয়ে তাঁর ত্ৰাণকাৰ্য উল্লেখযোগ্য।
পূর্ববর্তী:
« প্ৰফুল্লচন্দ্র রায়
« প্ৰফুল্লচন্দ্র রায়
পরবর্তী:
প্ৰফুল্লচন্দ্ৰ ঘোষ »
প্ৰফুল্লচন্দ্ৰ ঘোষ »
Leave a Reply