প্ৰজ্ঞানানন্দ সরস্বতী, স্বামী (১২-৮-১৮৮৪ – ৫-২-১৯২১) উজিরপুর-বরিশাল। ষষ্ঠীচরণ মুখোপাধ্যায়। পূর্বনাম সতীশচন্দ্র। দারোগা পিতার কর্মস্থল গলাচিপায় জন্ম। ১৯০১ খ্রী. প্ৰবেশিকা পাশ করে ঢাকায় এফ.এ. পড়েন। উজিরপুর স্কুলে দু’বছর শিক্ষকতার পর বঙ্গভঙ্গ-রোধ আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর বরিশাল শহরে এসে মহাত্মা অশ্বিনীকুমারের ব্ৰজমোহন ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতা করেন। ক্রমে স্বদেশবান্ধব সমিতির সহ-সম্পাদক হন। রসায়ন অধ্যাপক সতীশ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সম্পাদক। বরিশালে স্বদেশবান্ধব সমিতি সে-সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন ছিল। তাঁরই চেষ্টায় ১৯০৬ খ্রী. থেকে বরিশালে ‘যুগান্তর বিপ্লবী দলের ঘাঁটি তৈরি হয়। এই কারণে তিনি শিক্ষকতা ত্যাগ করেন। তখন থেকে একাহারে কায়কেশে ভরণপোষণ চালাতে থাকেন। ১৮১৮ খ্রীঃ ৩নং রেগুলেশনে বাঙলার ৯ জন নেতাঁর সঙ্গে ১৯০৮ খ্রী. অশ্বিনীকুমার ও সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দী হলে স্বদেশবান্ধব সমিতির দেড়শতাধিক শাখার পরিচালন-ভার তাঁরই ওপর পড়ে। জানুয়ারী ১৯০৯ খ্ৰী. সরকার এই প্ৰতিষ্ঠানটিকে বেআইনী ঘোষণা করে। বরিশালে ‘যুগান্তর’ দলের কেন্দ্ররূপে ‘শঙ্কর মাঠ’ গঠন করেন। প্রকাশ্যে তাঁর আদর্শ ছিল বেদান্ত প্রচার। ১৯০৯ খ্রী. থেকে কাশীতে যাতায়াত শুরু করেন। বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ও শচীন সান্যালের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। সেখানেও একটি বিপ্লবী ঘাঁটি গড়ে ওঠে। বিপ্লবী দল গঠন ছাড়াও কাশীতে বিখ্যাত সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদের সঙ্গে আলোচনা ও পাঠও চালাতেন। ১৯১৩ খ্ৰী. কাশীর য শঙ্করাচার্য সরস্বতীর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। ১৯১৫ খ্রী. কলিকাতায় অধ্যাপক সতীশচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে বাসকালে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। বিপ্লবী নেতারা তাঁর পরামর্শ নিতেন। কাশীতে তাঁর জনপ্রিয়তা ও বিপ্লবী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার মার্চ ১৯১৬ খ্রী. তাকে ভারতরক্ষা বিধানে গ্রেপ্তার করে স্বগ্রামে অন্তরীণ রাখে। পরে বরিশাল শঙ্কর মঠে বাস করবার অনুমতি পান। এই সময় আত্মগোপনকারী বিপ্লবী নেতা যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় ও নলিনী কর বরিশালে স্বামিজীর সঙ্গে আলোচনা করতে আসতেন। পরে সরকার তাঁকে মেদিনীপুরের মহিষাদলে অন্তরীণ করে। এখানে শুধু গ্রামের সাধারণ মানুষই নয়, সরকারী কর্মচারী ও মহিষাদলের রাজাও তাঁর ভক্ত ছিলেন। পরপর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। ১৯২০ খ্রী. মুক্ত হয়ে কলিকাতায় আসেন। কিন্তু মহিষাদলের শান্ত পরিবেশ ভাল লাগায় আবার ওখানেই ফিরে যান। পুনরায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মহিষাদল ত্যাগ করেন। কলিকাতায় তাঁর শিষ্য যোগেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বাড়ীতে মৃত্যু। তাঁর অনুগামীরা কলিকাতায় তাঁর নামে ১৯২০ খ্ৰী ‘সরস্বতী লাইব্রেরী’ ও ১৯২৩ খ্রী ‘শ্ৰীসরস্বতী প্রেস’ প্ৰতিষ্ঠা করেন। রচিত গ্ৰন্থ : ‘রাজনীতি’, ‘বেদান্তদর্শনের ইতিহাস’, ‘কর্মতত্ত্ব’, ‘সবলতা ও দুর্বলতা’ প্রভৃতি।
পূর্ববর্তী:
« প্ৰজ্ঞানন্দ স্বামী
« প্ৰজ্ঞানন্দ স্বামী
পরবর্তী:
প্ৰজ্ঞাবৰ্মা »
প্ৰজ্ঞাবৰ্মা »
Leave a Reply