প্যারীচরণ সরকার (২৩-১-১৮২৩ – ৩০-৯-১৮৭৫) চোরবাগান-কলিকাতা। ভৈরবচন্দ্ৰ। আদি নিবাস তড়াগ্রাম-হুগলী। হেয়ার সাহেবের পটলডাঙ্গা স্কুলের এবং পরে হিন্দু কলেজের ছাত্র ছিলেন। ১৮৪৩ খ্রী. হুগলী স্কুলে শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৮৪৬ – ৫৪ খ্ৰী বারাসত স্কুলের প্রধান–শিক্ষক-রূপে খ্যাতিলাভ করেন। এখানে তাঁর এবং নবীনকৃষ্ণ ও কালীকৃষ্ণ মিত্রের উদ্যোগে ১৮৪৭ খ্রী. ভারতীয় পরিচালিত প্ৰথম বেসরকারী বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এ ছাড়া কৃষি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও কারিগরি শিক্ষার বন্দোবস্ত করে প্রকৃষ্ট শিক্ষাবিদরূপে পরিচিত হন। এরপর কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুলে প্রধান-শিক্ষক হয়ে ৮ বছর ছিলেন। প্রধানত। তাঁরই প্রচেষ্টায় এই স্কুলের নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘হেয়ার স্কুল’ হয়। ১৯৬৩ খ্রী. প্রেসিডেন্সী কলেজের অস্থায়ী অধ্যাপক এবং ১৮৬৭ খ্রী. ঐ পদে স্থায়ী হয়ে আমৃত্যু কাজ করেন। বাংলার নবজাগরণে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। স্ত্রীশিক্ষা-প্রচারে একাধিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিধবা-বিবাহ-প্রচারেও বিদ্যাসাগরকে সাহায্য করেছিলেন। কৃষি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান-শিক্ষার সুষ্ঠা বন্দোবস্ত করেন। নারী শ্রমিকগণের সন্তানদের শিক্ষার জন্য তিনি কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং বেথুন স্কুলে মেয়েদের পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের প্রভাবিত করেন। ১৮৬৬ খ্রী. সরকারী সংবাদপত্ৰ ‘এড়ুকেশন গেজেট’-এর সম্পাদনার ভার গ্ৰহণ করেছিলেন। কিন্তু ১৮৬৮ খ্ৰী. পূর্ববঙ্গ রেলপথে সঙ্ঘটিত এক দুর্ঘটনার সত্য বিবরণ স্বীয় মন্তব্য সহ প্ৰকাশ করায় এই ব্যাপার নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য ঘটলে উক্ত পদ ত্যাগ করেন। মদ্যপান নিবারণের চেষ্টায় ১৮৭৫ খ্রী বঙ্গীয় মাদক নিবারণী সমাজ’ প্ৰতিষ্ঠা এবং ‘ওয়েল উইশার’ ও ‘হিতসাধক’ নামে দুখানি পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। ইডেন হিন্দু হোস্টেল স্থাপন তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব। শিশুদের ইংরেজী শিক্ষার সুবিধার জন্য তাঁর রচিত ‘First Book of Readings’ এবং ‘Second Book of Readings’ একসময়ে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর অসমাপ্ত শেষ গ্রন্থ: ‘The Tree of intemperance’। এই শিক্ষাব্রতী মনীষীকে ‘The Arnold of the East’ বলা হত।
পূর্ববর্তী:
« পৃথ্বীশচন্দ্র রায়
« পৃথ্বীশচন্দ্র রায়
পরবর্তী:
প্যারীচাঁদ মিত্র »
প্যারীচাঁদ মিত্র »
Leave a Reply