পূর্ণেন্দুকিশোর সেনগুপ্ত (১৮৯৫ – ১৭-১১-১৯৭৮) বানারি-ঢাকা। পিতা শ্যামকিশোর শ্ৰীহট্টে ওকালতি করতেন। শ্ৰীহট্টের কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা। বারাণসী ষড়যন্ত্র মামলার নেতা নগেন দত্ত শ্ৰীহট্ট শহরে অনুশীলন দলের শাখা গড়ে তুললে তিনি কিশোর বয়সেই তাতে যোগ দেন। ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএস-সি পড়ার সময় আচার্য প্ৰফুল্লচন্দ্ৰ রায়ের সংস্পর্শে আসেন। এমএস-সি. পরীক্ষা বর্জন করে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯২২ খ্রীঃ। ঢাকায় অভয় আশ্রমে যোগ দেন। বিক্রমপুরে বানারী গ্রামে ধীরেন্দ্ৰনাথ দাশগুপ্ত প্রতিষ্ঠিত ‘বিদ্যাশ্রম’-এর সম্পাদক নিযুক্ত হন। পদ্মার ভাঙ্গনে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখে ১৯২৫ খ্রী। তিনি বিদ্যাশ্রমটিকে শ্ৰীহট্টের রঙ্গরকুল গ্রামে তুলে আনেন। ১৯২৯ খ্রী. শ্ৰীহট্ট ও কাছাড়ের বন্যায় বন্যাত্রাণের নেতৃত্ব দেন। ১৯৩০ খ্রী. লবণ আইন অমান্য আন্দোলনে কারারুদ্ধ হন। ১৯৩১ খ্রী. সুরমা উপত্যকা কর্মী সম্মেলন আহ্বান করেন। ১৯৩২ খ্রী. আবার কারাদণ্ড হয়। মুক্তিলাভের পর মহিলাদের নিয়ে শ্ৰীহট্ট মহিলা সঙ্ঘ গঠন করেন। ভানুবিল পরগনার মণিপুরী কৃষকদের উপর অত্যাচার শুরু হলে তিনি কৃষকদের সঙ্ঘবদ্ধ করে মহাত্মা গান্ধীর আশীৰ্বাদ নিয়ে এক বিরাট গণসত্যাগ্ৰহ আরম্ভ করেন। এই সত্যাগ্ৰহে তাঁর আড়াই বছর জেল হলেও আসাম সরকার শ্ৰীহট্ট প্রজাস্বত্ব আইন প্রণয়নে বাধ্য হয়। তাঁর উদ্যোগে রঙ্গীরকুল বিদ্যাশ্রম বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৩৫ খ্রী. কংগ্রেসের সুবৰ্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে শ্ৰীহট্টে যে বিরাট শিল্প-প্ৰদৰ্শনী অনুষ্ঠিত হয়, তিনি তার পুরোধা ছিলেন। ১৯৩৮ খ্রী. তাঁরই আহ্বানে কুলাউড়ায় সুরমা উপত্যক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৰ্মা থেকে আগত উদ্বাস্তুদের তিনি সেবা করেন। এই সময় নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য হন। ১৯৪২ খ্রী. ‘ভারত-ছাড়’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিন বছর কারাগারে আটক থাকেন। ১৯৪৬ খ্রী. ব্রিটিশ ভারতের শেষ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসাম ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আসাম সরকারের বুয়াদী শিক্ষা কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। দেশ-বিভাগের পর পাকিস্তানেই থেকে যান এবং চা-শ্রমিকদের কল্যাণসাধনে ব্ৰতী হন। ১৯৫৪ খ্রী. মৌলবীবাজার মহকুমা থেকে আইন পরিষদে নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ খ্রী. সাপ্তাহিক জনশক্তি পুনরায় প্রকাশ করেন। ১৯৫৯ খ্রীঃ আয়ুব খান সরকারের আমলে তাঁর সংগঠিত চা-শ্রমিক ইউনিয়ন বেআইনী ঘোষিত হয়। ১৯৬৯ খ্রী. পাক-ভারত যুদ্ধকালে শ্ৰীহট্ট জেলে আটক থাকেন। রঙ্গরকুল আশ্রমে মৃত্যু। তাঁর ভ্রাতুষ্পপুত্ৰ বিমলাংশু মুক্তি-যুদ্ধকালে পাকসেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন।
পূর্ববর্তী:
« পূর্ণানন্দ স্বামী, মহারাজ
« পূর্ণানন্দ স্বামী, মহারাজ
পরবর্তী:
পূর্ণেন্দুনারায়ণ সিংহ, রায়বাহাদুর »
পূর্ণেন্দুনারায়ণ সিংহ, রায়বাহাদুর »
Leave a Reply