পঙ্কজকুমার মল্লিক (১৯০৫ – ১৯.২.১৯৭৮)। মণিমোহন। বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম। শিশুকাল থেকে গানের প্রতি অনুরাগ ছিল। তার গান শুনে গৃহে আমন্ত্রিত বিখ্যাত গায়ক দুৰ্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে মাৰ্গসঙ্গীতে তালিম দেন। পরে ঠাকুর পরিবারের দিনেন্দ্রনাথের সংস্পর্শে এসে তার কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা করেন। জনসাধারণের মধ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে জনপ্ৰিয় করায় তার বিশেষ অবদান আছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’ ও আর কয়েকটি গানের তিনিই একমাত্ৰ গায়ক যিনি নিজের সুর আরোপ করার সৌভাগ্য পেয়েছিলেন। ১৯২৬ খ্রী. ভিয়েলোফোন কোম্পানীতে তাঁর প্রথম রেকর্ড হয় ‘নেমেছে আজ প্ৰথম বাদল। ১৯২৭ খ্রী. ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানীর শুরু থেকে তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরই পরিচালনায় সঙ্গীত শিক্ষার আসরটি প্ৰাণবন্ত হয়ে ওঠে। আকাশবাণী থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ‘মহিষমর্দিনী’র তিনি ছিলেন সঙ্গীত-পরিচালক। ১৯৭৫ খ্রী সঙ্গীত শিক্ষার আসর থেকে তাকে অবসর দেওয়া হয়। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে গায়ক, শিক্ষক, পরিচালক ও অভিনেতা–বিভিন্ন রূপে তাঁর প্রতিভা প্ৰকাশ পেয়েছে। প্ৰথমে নির্বাক ছবি ‘চাষার মেয়ে’ ও ‘চোরকাঁটা-য় তিনি অর্কেস্ট্রায় সুর রচনা করেন। সঙ্গীত-পরিচালক হিসাবে তাঁর প্রথম চিত্র ‘দেনাপাওনা’। ‘ভাগ্যচক্ৰ’, ‘ডাক্তার’, ‘কাশীনাথ’, ‘বড়দিদি’, ‘রাইকমল’, ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ প্রভৃতি বহু ছবিতে সুরারোপ করেন। নিউ থিয়েটার্স কোম্পানীর সঙ্গে খুব জড়িত ছিলেন। প্ৰমথেশ বড়ুয়ার মুক্তি’ ছবিতে গায়ক শিল্পী হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। অন্যান্য অনেক ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রয়োগে তাঁর নাম স্মরণীয়। ডাঃ বিধানচন্দ্রের অনুরোধে সরকারের ‘লোকরঞ্জন শাখা গড়ে তোলেন। দীর্ঘ শিল্পিজীবনে অনেক সম্মান পেয়েছেন। ১৯৩২ খ্রী. সারস্বত মহামণ্ডল তাকে ‘সুরসাগর’ উপাধি দেন। ১৯৭০ খ্ৰী. ‘পদ্মশ্ৰী’ উপাধি ও ১৯৭৩ খ্রী. ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ পান। রচিত গ্ৰন্থ: ‘আমার যুগ আমার গান’।
পূর্ববর্তী:
« পঙ্কজ গুপ্ত
« পঙ্কজ গুপ্ত
পরবর্তী:
পঙ্কজিনী বসু »
পঙ্কজিনী বসু »
Leave a Reply