নেপালচন্দ্র রায় (১৮৬৭ – জানু ১৯৪৪) মূলঘর–খুলনা। কাশীনাথ। খুলনা জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, কলিকাতায় ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউশন থেকে এফ.এ. ও জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। প্রৌঢ়বয়সে ওকালতি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে উচ্চপদের সরকারী চাকরি প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকতা-বৃত্তি গ্রহণ করেন। মূলঘর উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-প্ৰধানশিক্ষকরূপে তার কর্মজীবনের সূচনা। পরে কলিকাতায় সিটি কলেজিয়েট স্কুল, শশিপদ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয় প্রভৃতিতে কাজ করেন।
১৯০১ খ্ৰীএলাহাবাদের অ্যাংলো-বেঙ্গলী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ গ্ৰহণ করেন। তার পরিচালনায় এই বিদ্যালয়ের খ্যাতি সমগ্ৰ উত্তরভারতে বিস্তারলাভ করে। কিন্তু বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিয়ে এলাহাবাদে এই আন্দোলনের প্রধান সংগঠকের ভূমিকা গ্রহণ করায় উত্তর প্রদেশের গভর্নর তাঁকে বিদ্যালয় থেকে অপসারিত করবার নির্দেশ দেন। বিদ্যালয়ের পরিচালকমন্ডলী প্ৰাদেশিক সরকারের এই নির্দেশ অগ্ৰাহ্য করতে প্রস্তুত থাকলেও বিদ্যালয়ের অনিষ্ট হবার সম্ভাবনা বিবেচনা করে তিনি ১৯০৯, খ্রী. স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে কলিকাতায় এসে ওকালতি ব্যবসায়ে যোগদান করতে তৎপর হন। এই সময় শান্তিনিকেতন ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার জন্য রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে ১৯১০ খ্রী. শান্তিনিকেতনে আসেন। ক্ৰমে শান্তিনিকেতনের শিক্ষা-প্ৰচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথের অন্যতম প্ৰধান সহযোগী হয়ে ওঠেন। অধ্যাপনা ছাড়া বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগ পরিচালনার দায়িত্বও তিনি নানা সময়ে গ্ৰহণ করেছেন। দেশের সামাজিক নানা সমস্যা এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলীও তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করত। এই কারণে শান্তিনিকেতনের কাজ থেকেও দু-একবার বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিলেন।। কলিকাতায় শিক্ষকতাকালে স্ত্রীশিক্ষা প্রচার ও অন্যান্য সমাজকল্যাণ কর্মে নিযুক্ত নানা প্রতিষ্ঠানের তিনি উৎসাহী ও সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এলাহাবাদে প্রবাসী বাঙালী সমাজের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ-প্ৰচেষ্টায় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগী ও প্ৰধান সহায় ছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। কংগ্রেস ন্যাশনাল পার্টি স্থাপনে ডঃ প্রমথনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে সহায়তা করেন। পরে হিন্দু মহাসভার সক্রিয় সদস্য হন। তার রচিত ‘ভারতকথা’, ‘শিশুরঞ্জন ভারতকথা’, ‘ইংলন্ডের ইতিহাস’, ‘ভূপরিচয়’, ‘শিশুরঞ্জন ভূপরিচয়’ প্রভৃতি পাঠ্যপুস্তকগুলি যথেষ্ট প্ৰশংসা পেয়েছিল।
Leave a Reply