নেপালচন্দ্ৰ নাগ (১৯০৮ – ৪.৯.১৯৭৮) তেজগাও — ঢাকা। সুরেশচন্দ্ৰ। ভাল নাম শৈলেশচন্দ্র হলেও নেপাল নামেই সুপরিচিত ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই স্বদেশী ভাবাপন্ন ছিলেন। ১৯২৩–২৪ খ্রী. লীলা নাগ পরিচালিত ‘শ্ৰীসঙ্ঘ’-এ যোগ দেন। আইএ পাশ করার পরে বিপ্লবী কাজকর্মে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ঢাকা শহরের বুকে যারা গোয়েন্দা পুলিসের সহায়তা করত, তাদের শায়েস্তা করতে তখনকার অন্যান্য কর্মী সুপতি রায়, জিতেন দে প্রভৃতির সঙ্গে তিনিও ছিলেন। কুমিল্লা, ঢাকা, কলিকাতা, মেদিনীপুর, সুদুর মুঙ্গের পর্যন্ত অনেক কর্মকাণ্ডের উদ্যোগী কর্মী ও যোগাযোগের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র ছিলেন তিনি। তার প্রৌঢ়া মাকেও এ কাজে তিনি সহায়ক করে নেন। বহু আত্মগোপনকারী বিপ্লবী তাদের গৃহে আশ্রয় পেয়েছেন।
১৯৩১ খ্রী. শেষের দিকে বাঙলাদেশে সংঘটিত কয়েকটি বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের। অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ২১-৪-১৯৩২ খ্রী. গোপন আস্তানায় ধরা পড়ে বিনা বিচারে বিভিন্ন জেলে আটক থাকেন। কারাবাস-কালে বিপ্লবী নেতা রেবতী বর্মণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ফলে কমিউনিষ্ট মতবাদে আকৃষ্ট হন ও কমিউনিস্ট কনসলিন্ডেশনে যোগদান করেন। ১৯৩৮ খ্রী মুক্তির পর কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ঢাকার নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে কৃতিত্ব দেখান। কমিউনিস্ট পার্টির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হলে কলিকাতায় প্রাদেশিক সংগঠনের সদস্য হিসাবে কয়েক বছর থাকার পর দেশ-বিভাগের সময় তখনকার পূর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হিসাবে সেখানে কর্মক্ষেত্ৰ বেছে নেন। পঞ্চাশ দশক অবধি ‘রহমান ভাই’ নামে পরিচিত হয়ে গোপন পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন। পরে যক্ষ্মারোগ ধরা পড়ায় পূর্ব-পাকিস্তান থেকে তাকে গোপনে ভারতে আনা হয় ও ১৯৫৯ খ্রী. জওহরলাল নেহেরুর অনুমতিক্রমে মস্কোতে চিকিৎসার জন্য যান। ঐখানে বিশ্ব কমিউনিস্ট মহাসম্মেলনে পূর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির প্ৰতিনিধিত্ব করেন। ১৯৬২ খ্রী. কমিউনিস্ট পার্টির ২২তম কংগ্রেসেও মস্কোতে পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অসুস্থতার দরুন কলিকাতায় তার স্ত্রী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নিবেদিতার মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তানের আন্দোলন ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
Leave a Reply