নৃপেন্দ্রনাথ বসু, ডাঃ (১-৪-১৮৯৪ – ৯-১১-১৯৮২) গোদা-গোবিন্দবাটী-বর্ধমান। প্ৰসন্নকুমার। পিতার কর্মস্থল বিহারের পাটনায় জন্ম। কুমিল্লা অভয় আশ্রমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, মহাত্মা গান্ধীর অনুগামী, নেতাজী সুভাষচন্দ্রের সহকর্মী ও খ্যাতনামা চিকিৎসক। তার শিক্ষা-কটকে ও পরে কলিকাতায়। বিএসসি, এম,বি, পাশ করে প্রথমে ঢাকা ও ১৯২৩ খ্রী. কুমিল্লায় যান।
১৯২৩-৪৭ খ্রী কর্মোপলক্ষে ত্রিপুরা, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম, শ্ৰীহট্টে কাটান। দেশবিভাগের পর ভারতে ফিরে ১৯৫৩–৫৭ খ্ৰী বাঁকুড়া জেলায় চিকিৎসক হিসাবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ডাঃ সুরেশচন্দ্ৰ ব্যানার্জীর সঙ্গে কুমিল্লায় প্রথম বেসরকারী মেডিক্যাল স্কুল, মেডিক্যাল কলেজ ও ২০টি শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। চাদপুর কুলিবিভ্রাটকালে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহনের আহ্বানে ৭০ জন ডাক্তারকে নিয়ে সেবাকাৰ্য পরিচালনা করেন। ডাঃ সুরেশ ব্যানার্জী প্রতিষ্ঠিত ব্রাদার হুড, সবিতা আশ্রম এবং অভয় আশ্রম সংগঠনের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। ১৯২৫ খ্রী তিনি সম্পাদক থাকাকালে অভয় আশ্রম সর্বপ্ৰথম আইনগত স্বীকৃতি পায়। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবাংলা অভয় আশ্রম পুনগর্ঠন করেন।
১৯২১-২২ খ্রী. ঢাকা জেলা কংগ্রেস কমিটির এবং ১৯৩৫–৪৭ খ্রী ত্রিপুরাজেলা কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক ছিলেন। গান্ধীজীর অনুগামী হলেও ত্রিপুরী কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্ৰকে সমর্থন করেছেন। ১৯৪৬ খ্রী. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় স্বেচ্ছাসেবীবাহিনী নিয়ে মেহার কালীবাড়িকে রক্ষা করেন। পরে ত্রিপুরা জেলায় গান্ধীজীর পদযাত্রার ব্যবস্থাপক ছিলেন। দেশভাগের পরও কুমিল্লায় থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কাশ্মীর যুদ্ধে চিকিৎসকরূপে যোগদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তার উপর নোটিশ জারী করায় ১২ ঘন্টার মধ্যে তিনি কুমিল্লা ছেড়ে কলিকাতায় চলে আসেন। এখানে বঙ্গীয় কংগ্রেস কমিটির যুগ্মসম্পাদক ছিলেন। ১৯৫০ খ্ৰী. কংগ্রেস ত্যাগ করে বাংলা কৃষক মজদুর পার্টি গঠন করেন। পরে এটি আচার্য কৃপালনীর কৃষক মজদুর প্রজা পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়। প্ৰজা-সমাজতন্ত্রী দলের প্রাদেশিক নেতা ছিলেন। পরে দলগত রাজনীতি ছেড়ে আচার্য বিনোবাজীর ভুদান আন্দোলনে যোগ দেন। তারই উদ্যোগে সমগ্ৰ বাঁকুড়া জেলায় সর্বোদয় আন্দোলন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৫ খ্ৰীবিনোবাজীর পদযাত্রার ব্যবস্থাদি করেন।
১৯৬১ খ্রী পশ্চিমবাংলায় গঠন কর্মী সম্মেলন সৃষ্টি করে গান্ধীবাদীদের পুনরায় রাজনীতিতে যোগদানের আহ্বান জানান। ১৯৭৫ খ্রী. দেশে জরুরী অবস্থা জারীর বিরোধিতা করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘ সাড়ে আট বছর কারাগারে বন্দী থাকেন। পশ্চিমবঙ্গে অম্বর চরকা প্ৰচলনে এবং তার বিভিন্ন প্রকরণ আবিষ্কারে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন। ১৯৫৬ খ্রী. থেকে দশ বছরের মধ্যে পশ্চিমবাংলার ১৩টি জেলায় মোট ৬৮টি চরকাকেন্দ্ৰ স্থাপন করেন। ২৪ পরগনার বিরাটী অভয় আশ্রমে ১৯৭০-৭২ খ্রী লম্বা আঁশের তুলাবীজ চাষের প্রচলন করেছিলেন। দেশবিভাগের পর ডাঃ রাজেন্দ্ৰপ্ৰসাদের সভাপতিত্বে গঠিত ইস্টবেঙ্গল সেন্ট্রাল রিলিফ কমিটির বঙ্গীয় প্ৰাদেশিক শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কলিকাতা মহানগরীর চতুর্দিকে ২১টি উদ্ধাস্তু শিবির পরিচালনা করেন। রচিত গ্ৰন্থ : ‘শিশুদের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান’, ‘চরকা ও কুটীর শিল্পী’, ‘দানবীর মহেশ ভট্টাচাৰ্য স্মৃতি’, ‘অভ্যুদয়’, ‘অভয় আশ্রম নিবেদন’। মৃত্যুর একমাস আগে ‘কর্মযোগিন’ পত্রিকা প্ৰকাশ করেছেন। ১৯৮১ খ্রী. অভয় আশ্রম পরিত্যাগ করে ‘সবিতা মিশন’ নামে নতুন এক সেবা ও সাধনার কেন্দ্র প্ৰতিষ্ঠা করেন। ‘ব্রাদারহুড থেকে সবিতামিশন’ তার আত্মজীবনীমূলক গ্ৰন্থ।
Leave a Reply