নীহাররঞ্জন রায়, ডঃ (১৪-১-১৯০৩ – ৩০-৮-১৯৮১) ময়মনসিংহ। মহেন্দ্ৰচন্দ্ৰ। শিক্ষা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, ঐতিহাসিক ও শিল্পবিষয়ক গবেষণা, রাজনীতি ও নানা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯২৪ খ্ৰী. সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স সহ বি.এ. পাশ করেন। ১৯২৬ খ্রী. প্ৰাচীন ভারতীয় ইতিহাসে ফাইন আর্টস শাখায় এম-এ-তে প্ৰথম শ্রেণীতে প্ৰথম হন। গবেষণাকাজে লিপ্ত হয়ে একাধিক পুরস্কার ও বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৮ খ্রী. প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি ও মোয়াটি পদক পান। প্ৰাচীন ভারতীয় ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপনায় দিয়ে কর্মজীবন শুরু।
১৯৩৫ খ্রী. ঘোষ ট্রাভেলিং বৃত্তি নিয়ে ইউরোপ যান। সেখানে লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ও লন্ডন থেকে গ্ৰন্থাগার পরিচালনার ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৩৭ খ্ৰী. দেশে ফিরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ খ্রী. ভারতীয় সূক্ষ্মশিল্পকলার ‘রাণী বাগীশ্বরী’ অধ্যাপক-পদ লাভ করেন। ১৯৬৫ খ্রী. অবসর গ্রহণের পর তাঁকে এমিরিটাস প্রফেসর করা হয়। আর্টস ফ্যাকালটির ডীন নিযুক্ত হয়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। সিমলায় প্রতিষ্ঠিত অগ্রসর গবেষণা সংস্থার তিনিই প্ৰথম ডিরেক্টর এবং ১৯৭৩ খ্রী. পর্যন্ত ঐ পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।
১৯৭৩ – ৭৬ খ্রী. ইউনেস্কোর প্রতিনিধি হিসাবে তিনি ব্ৰহ্মসরকারের সংস্কৃতি ও ইতিহাস-বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। দেশে ও বিদেশে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সদস্য, জাতীয় গ্রন্থাগারের কর্মসমিতির সভাপতি, সরকার মনোনীত রাজ্যসভার সদস্য (১৯৫৭ – ৬৫) ছিলেন। ভারতের ইতিহাস কংগ্রেস (১৯৬৫) এবং প্রাচ্যবিদ্যা মহাসম্মেলনের (১৯৮০) সভাপতিত্ব করেন। রাজনীতিক্ষেত্রে সক্রিয় অংশ গ্ৰহণ করার সূত্রে সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় অনুশীলন সমিতির প্রতি আকৃষ্ট হন।
১৯২০ খ্রী. অসহযোগ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিক্ষেত্রে প্রবেশ করেন এবং সুভাষচন্দ্ৰ প্ৰতিষ্ঠিত ‘লিবার্টি পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের ভার পান। পরে আরএসপি দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই দলের মুখপাত্র ‘ক্রান্তি’ পত্রিকার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। ১৯৪২ খ্রী. ‘ভারত-ছাড়’ আন্দোলনে কারাবরণ করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপত্ৰ ‘ক্যালকাটা রিভিয়্যু’ পত্রিকার পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এক সময় বেনেট কেমিক্যাল কোম্পানীর ডিরেক্টর হয়েছিলেন।
বিবিধ কৰ্মকুশলতার জন্য তিনি ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন। রবীন্দ্ৰকাব্যের অন্যতম ব্যাখ্যাতা হিসাবে পরিচিতিলাভ করেন। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : ‘রবীন্দ্র সাহিত্যের ভূমিকা’, ‘An Artist in Life : A Commentary on the Life and Works of Rabindranath Tagore’। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ ‘Brahminical Gods in Burma’, ‘Sanskrit Buddhism in Burma’, ‘An introduction to Theravada Buddhism in Burma’, ‘Mayurya and Surya Art’, ‘ldea and Image in Indian Art’, ‘Mughal Painting: A Social and Formal Analysis’, ‘An Approachto Indian Arť প্রভৃতি। কিন্তু তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি বোধহয় ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদিপর্ব গ্রন্থটি। এই গ্রন্থকে পুরস্কার দিয়েই সরকার ‘রবীন্দ্রপুরস্কার’ এর সূচনা করেন। উত্তরকালে ‘জ্ঞানপীঠ সাহিত্য পুরস্কার’ কমিটির সদস্য ও সভাপতি হয়েছিলেন।
Leave a Reply