নির্মলকুমার বসু (২২-১-১৯০১ – ১৫-১০-১৯৭২) কলিকাতা। নৃতত্ত্ববিদ ও গান্ধীবাদী। শিক্ষা-পাটনার অ্যাংলো-স্যান্সক্রিট স্কুল, কামারহাটি সাগর দত্ত ফ্রি স্কুল, রাচি ও পুরী জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯২১ খ্ৰী. বি.এস-সি-তে ভূতত্ত্বে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স ও ১৯২৫ খ্রী. নৃতত্ত্বে প্রথম শ্রেণীতে এমএস-সি পাশ করেন। ১৯১৬ খ্রী. সুভাষচন্দ্র বসুর সংস্পর্শে এসে নানারকম সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হন। ১৯৩০ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতিত্ত্ব শাখার রিসার্চ ফেলো হিসাবে কাজ করার সময় গান্ধীজীর আহ্বানে লবণ সত্যাগ্ৰহ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৪২ খ্রী. ‘ভারত-ছাড়’ আন্দোলনে অংশগ্ৰহণ করে দ্বিতীয় বার কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৪৬–৪৭ শ্ৰী, বাঙলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার সময় তিনি গান্ধীজীর একান্ত-সচিবের গুরু দায়িত্ব পালন করেন। গান্ধীজীর রাজনৈতিক দর্শন এবং রাজনৈতিক কর্মপদ্ধতি তিনি বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করে তার মতবাদ প্রচার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যা তিনি যুক্তিতর্ক দিয়ে গ্ৰহণ করতে পারেন নি তা বর্জন করেছেন। গান্ধীজীর প্রার্থনা-সভায় তাকে দেখা যেত না। গান্ধীজী সম্পর্কে তিনি তার চিন্তা রেখে গেছেন ‘মাই ডেজ উইথ গান্ধীজী’ গ্রন্থে। তার পাণ্ডিত্যের খ্যাতি ছিল সারা বিশ্বে। এদেশে নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, সমাজ-বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, লোকসংস্কৃতি প্রভৃতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু ক্ষেত্রে তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
১৯৩৮–১৯৪২ খ্রী. পর্যন্ত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৯–১৯৬৪ খ্রী. পর্যন্ত অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়ার ডিরেক্টর ছিলেন। তার প্রধান ব্ৰত ছিল ভারতের সমাজ ও সংস্কৃতির পরিবর্তনের ধারাকে নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করা। এজন্য তিনি নৃতত্ত্বের পদ্ধতির সঙ্গে হিউম্যান জিওগ্রাফি, মানবপ্রকৃতি বিজ্ঞানের সামাজিক ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্বের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। ভারতীয় মন্দির-স্থাপত্য, লোকসংস্কৃতি, গ্ৰামজীবন এবং প্রাচীন ইতিহাস বিষয়ে তিনি প্ৰায় সারাজীবন গবেষণা করেছেন। সারা ভারতবর্ষের গ্রামজীবনের সাংস্কৃতিক উপকরণ সংগ্ৰহ করে ও তার বিশ্লেষণ করে তিনি ভারতের ‘পেজেন্ট লাইফ-এ স্টাডি অন ইউনিটি ইন দি ডাইভার্সিটি গ্রন্থটি সম্পাদনা করেন। মানুষকে জানা ও বোঝার জন্য পদব্রজে প্ৰায় গোটা ভারতবর্ষ পরিক্রমা করেছেন। তার বিজ্ঞানী চেতনার অন্তরালে যে কবিপ্ৰাণতা ও দার্শনিক উপলব্ধির স্রোত প্রবাহিত ছিল তার পরিচয় পাওয়া যায় তার রচিত ‘পরিব্রাজকের ডায়েরী’, ‘বিদেশের চিঠি’, ‘নবীন ও প্রাচীন’ প্রভৃতি গ্রন্থে। শরৎচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত ‘ম্যান ইন ইণ্ডিয়া’ পত্রিকাখনির সম্পাদকরূপে তিনি প্ৰায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সম্পাদকের ভার নিয়ে তার প্রভূত উন্নতি করেন। ‘ভারতকোষ’-এর তিনি অন্যতম স্রষ্টা ছিলেন। ইংরেজী ও অনেকগুলি ভারতীয় ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন।
Leave a Reply