নিবেদিতা, ভগিনী (২৮-১০-১৮৬৭ – ১৩-১০-১৯১১) ডানগ্যানন-আয়ার্ল্যান্ড। স্যামুয়েল। পূর্বনাম মাৰ্গারেট এলিজাবেথ নোবল। ১৮৮৪ খ্রী. হ্যালিফ্যাক্স স্কুলের পাঠ সমাপ্ত করে বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষয়িত্রীর কাজ নেন। স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনী এবং রাশিয়ার বিপ্লব কাহিনী অধ্যয়ন করেন ও ক্রপটকিন প্রমুখ নির্বাসিত বিপ্লবীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন। বালক-বালিকাদের মধ্যে এই চেতনা সঞ্চারের জন্য ১৮৯২ খ্রী. ‘রাস্কিন স্কুল’ স্থাপন করেন। মাৰ্গারেট যখন প্রচলিত ধর্ম ও গতানুগতিক অধ্যাপনা-সম্পর্কে সংশয়ে দোদুল্যমান, এমন সময় স্বামী বিবেকানন্দ ইংল্যান্ডে আসেন।
নভেম্বর ১৮৯৫ খ্রী. এক আলোচনা-চক্ৰে তিনি প্ৰথম বিবেকানন্দকে দেখেন এবং তাঁর বাণী শুনে মুগ্ধ হন। স্বামীজীর প্রভাবে তার জীবনের পরিবর্তন হয়। ১৮৯৮ খ্ৰী. তিনি স্বামীজীর আহ্বানে ভারতে আসেন। ২৫ মার্চ স্বামীজী তাকে ব্ৰহ্মচর্যে দীক্ষিত করে ‘ভগিনী নিবেদিতা’ নামে অভিহিত করেন। এই সময় কলিকাতায় পরপর দু’বছর প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হলে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে নিবেদিতাও সেবাকার্যে ব্ৰতী হন। পরে তিনি বিবেকানন্দের সঙ্গে আলমোড়ায় যান।
১৩-১১-১৮৯৮ খ্রী. বিবেকানন্দের পরিকল্পনামত বাগবাজার বোসপাড়া লেনে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয়টি বর্তমানে নিবেদিতার নামাঙ্কিত। ৪-৭-১৯০২ খ্রী. স্বামীজীর দেহত্যাগের পর তিনি ভারতের রাষ্ট্ৰীয় মুক্তি আন্দোলনে অংশগ্ৰহণ করেন। তিনি ভারতীয় কলাবিদ্যার মূলে আধ্যাত্মিকতার সন্ধান পান ও ভারতীয় কলার বিশুদ্ধ সৌন্দর্যে অনুপ্রাণিত হন। এই উপলক্ষে অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল প্রমুখ শিল্পগুরু ও সতীশ মুখোপাধ্যায়ের ‘ডন সোসাইটির সংস্পর্শে আসেন। বরোদায় অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগে প্রমথ মিত্র (ব্যারিস্টার পি, মিত্র) ও নিবেদিতা বিপ্লব আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা গ্ৰহণ করেন।
১৯০৩ খ্রী. জানুয়ারী মাসে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগদানের জন্য রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিন্ন করতে হয়। যোগাযোগ ছিন্ন করলেও আত্মপরিচয়-দানের সময় ‘সিস্টার নিবেদিতা অফ রামকৃষ্ণ অ্যান্ড বিবেকানন্দ’ এই কথাগুলি লিখতেন। তিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন। বারাণসী জাতীয় কংগ্রেসে বিলাতী দ্রব্য বর্জনের জন্য প্রদত্ত তার উদ্দীপনাময়ী ভাষণে শ্রোতারা মুগ্ধ হন। জাতীয় কংগ্রেসের চরম ও নরম উভয়পহীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। নিবেদিতার স্বপ্ন ছিল-অখণ্ড ভারতবর্ষ। ভারতের গ্রাম ও নগরকে পুনরুজ্জীবিত করে সমৃদ্ধ ভারতের গঠনে যুবকদের অনুপ্রাণিত করতেন। ভারতের রাষ্ট্রীয় মুক্তিলাভই ছিল তাঁর জীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। ভারতের রাষ্ট্ৰীয় মুক্তি তার মতে আত্মিক মুক্তির উপায়মাত্র, তা উপেয় নয়। বিবেকানন্দ-প্ৰদৰ্শিত অদ্বৈতবাদের প্রতি তাঁর একনিষ্ঠ অনুরাগ ছিল। জগদীশচন্দ্ৰ বসু ও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। ভারতের মঙ্গলে নিবেদিতপ্ৰাণ এই বিদেশিনী রোগমুক্তির আশায় দাৰ্জিলিং-এ আচার্য জগদীশচন্দ্র ও লেভী অবলা বসুর আতিথ্য গ্ৰহণ করেন এবং সেখানেই মারা যান। রচিত উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থাবলী : ‘দি ওয়েব অফ ইণ্ডিয়ান লাইফ’, ‘কালী দি মাদার’, ‘ক্র্যাডল টেলস অফ হিন্দুইজম’, ‘রিলিজিয়ন অ্যান্ড ধর্ম’, ‘দি মাস্টার অ্যাজ আই সি হিম’, ‘নোটস অফ সাম ওয়ানডারিংগস উইথ স্বামী বিবেকানন্দ’, ‘সিভিক অ্যান্ড ন্যাশনাল আইডিয়্যালস’, ‘শিব অ্যান্ড বুদ্ধ’, ‘হিন্টস অন ন্যাশনাল এড়ুকেশন ইন ইণ্ডিয়া’, ‘অ্যাগ্রেসিভ হিন্দুইজম’ প্রভৃতি।
Leave a Reply