নিবারণচন্দ্ৰ দাশগুপ্ত (১৮৬৭–১৭৭-১৯৩৫) গাউপাড়া-ঢাকা। তারকনাথ। প্ৰথমে সংস্কৃত অধ্যয়নের পর বরিশাল ব্ৰজমোহন ইনস্টিটিউশন থেকে প্ৰবেশিকা (১৮৯৩) এবং এফ.এ. (১৮৯৫) পাশ করেন। এখানে অধ্যয়নকালে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার ও আচার্য জগদীশচন্দ্ৰ মুখোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে এসে সেবাকার্যে ব্ৰতী হন। বি.এ. পাঠরত অবস্থায় সংসার ত্যাগ করে পরিব্রাজক হন। আত্মীয়গণ গৃহে ফিরিয়ে এনে বিবাহ দেন (১৮৯৮)।
১৯০০ খ্রী. বি-এ পাশ করেন এবং স্কুলের আসেন। সরকারী কাজে যেখানেই গিয়েছেন সংস্কৃত কাব্যশাস্ত্ৰ পাঠ ও আলোচনার সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সময়েই তাঁর পুস্তিকা ‘প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি’, ‘আর্যক্রিয়া’ এবং ‘রামপ্রসাদী সঙ্গীত’ প্ৰকাশিত হয়। কাঁথিতে অবস্থানকালে রাজনৈতিক কারণে পুলিস তার আবাস খানাতল্লাসী করে। ১৯১১ খ্রী। তিনি মানভূমে বদলী হন। এখানেই বি.টি. পাশ করেন। এই সময় স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
১৯১৪ খ্ৰী. পুরুলিয়া জেলা স্কুলের শিক্ষক ও ১৯১৬ খ্রী. প্ৰধান শিক্ষক হন। আদর্শ শিক্ষক ও সমাজের একনিষ্ঠ সেবকরূপে এখানে তিনি সকলের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেন। রাঁচি শিক্ষা সম্মেলনে ‘প্রাচ্য শিক্ষার আদর্শ’ নামে মৌলিক গবেষণামূলক এক প্রবন্ধ পাঠ করেন।
১৯২১ খ্রী. অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং দীর্ঘদিনের সরকারী কাজ, এমন কি পেন্সনও ত্যাগ করেন। কয়েকজন আত্মত্যাগী কর্মীর সাহায্যে তিনি শিল্পবিদ্যালয় স্থাপন করে দেশলাই প্ৰস্তুত করান, তিলক জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন করেন, খাদি ও চরকার প্রচার করেন এবং সর্বোপরি ‘লোকসেবক সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৫ খ্রী–দেশবন্ধু প্রেস স্থাপন করে সেখান থেকে সাপ্তাহিক ‘মুক্তি’ পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। ১৯২৭ খ্ৰী বাঁকুড়া জেলা রাজনৈতিক সম্মেলনে সভাপতি হয়েছিলেন। হরিপদ দাঁ নামে একজন অনুরাগীর দানে তিনি পুরুলিয়া শিল্পাশ্রমের গৃহ প্ৰস্তুত (১৯২৮) করেন। ‘মুক্তি’ পত্রিকায় ‘বিপ্লব’-শীর্ষক সম্পাদকীয় নিবন্ধের জন্য রাজদ্রোহের অপরাধে তার এক বছরের কারাদণ্ড (১৯২৯) হয়। পরের বছর মুক্তি পান ও মানভূম জেলা রাজনৈতিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। মে ১৯৩০ খ্ৰী. প্রেস অর্ডিন্যান্সের ফলে দেশবন্ধু প্রেস ও মুক্তি পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। ঐ বছরেই সত্যাগ্ৰহ আন্দোলনে যোগ দিয়ে ৬ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৩১ খ্রী. মুক্তি পেয়ে তিনি কাঁথি, শ্ৰীহট্ট প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাবিষয়ক বক্তৃতা দান করেন এবং নিজ আশ্রমের কর্মীদের শিক্ষাদানের জন্য রঘুনাথপুর। চরগালীতে অস্থায়ী শিক্ষা-শিবির স্থাপন করেন। দ্বিতীয় সত্যাগ্ৰহ আন্দোলনে তার দেড় বছর কারাদণ্ড হয়। তার শিল্পাশ্রমও বেআইনী বলে ঘোষিত হয়। কারামুক্তির সঙ্গে সঙ্গে তিনি যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হন। রাচীতে বিপ্লবী ডাঃ যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় প্রধানত তার চিকিৎসা করতেন। ৩০-৪-১৯৩৪ খ্রী. গান্ধীজী তার শষ্যাপার্শ্বে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। শেষ কয়দিন তিনি গীতা পাঠ করে কাটান। পুরুলিয়ায় নিজ আশ্রমে দেহত্যাগ করেন। তিনি রাচীর উপজাতি ঘেড়িয়া ও হরিজনদের প্রকৃত বন্ধু ছিলেন এবং তাদের জীবনালেখ্য তিনি গল্পকারে ‘দেশ’, ‘যুগশঙ্খ’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশ করতেন। সাধারণ্যে তিনি ‘ঋষি’ আখ্যা পান এবং ‘মানভূমের গান্ধী’ নামে। পরিচিত ছিলেন। গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্ৰামী বিভূতিভূষণ তাঁর পুত্র।
Leave a Reply