নরেন্দ্র দেব (৭-৭-১৮৮৮ – ১৯-৪-১৯৭১) ঠনঠনিয়া-কলিকাতা। নগেন্দ্ৰচন্দ্ৰ। কলিকাতার তৎকালীন বনেদী ও প্ৰগতিশীল পরিবারে জন্ম। জ্যোঠামহাশয় উপেন্দ্ৰচন্দ্র ছিলেন ডিরোজিওর শিষ্য। যৌবনে জ্ঞাতি-দাদা রাজেন দেবের প্রভাবে গুপ্ত বিপ্লবী দলে যোগ দিলেও সাহিত্য-ক্ষেত্রেই জীবন কাটিয়েছেন। মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পাশ করেন, কিন্তু স্বাস্থ্যের কারণে কলেজী শিক্ষালাভ হয় নি। তবে সারা জীবন পড়াশুনার মধ্যেই নিয়োজিত থাকেন।
ব্ৰহ্মবান্ধবের ‘সন্ধ্যা’ পত্রিকাতে তার প্রথম কবিতা ছাপা হয়। তার রচিত প্ৰথম গল্পগ্রন্থ ‘চতুর্বেদাশ্রম’, প্রথম উপন্যাস ‘গরমিল’ ও প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বসুধারা’। ‘ওমর খৈয়াম’-এর কাব্যানুবাদ প্রকাশের (১৯২৬) সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর খ্যাতি বিস্তৃত হয়। গল্প, উপন্যাস, কবিতা এবং শিশুসাহিত্য-সর্বক্ষেত্রেই তিনি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ‘ভারতী’, ‘কল্লোল’ ও ‘কৃত্তিবাস’—বাংলা সাহিত্যের তিন যুগের এই পত্রিকাগুলির লেখক-গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সমান হৃদ্যতা ছিল। তিনি বিখ্যাত নাট্য-সাপ্তাহিক ‘নাচঘরের’ এবং প্রথম চলচ্চিত্ৰ সাপ্তাহিক ‘বায়োস্কোপে’র পরিচালক ছিলেন। ছোটদের জন্য প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘পাঠশালা’ তিনি দীর্ঘ পনের বৎসর সম্পাদনা করেন। সাহিত্যজীবনে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্ৰ, অক্ষয় বড়াল, কান্তকবি, নজরুল, মোহিতলাল এবং সত্যেন্দ্ৰনাথ দত্তের অন্তরঙ্গ ছিলেন। আবার সিনেমা-থিয়েটারের তৎকালীন শিল্পীরাও তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বালবিধবা সাহিত্যিক রাধারাণীর সঙ্গে তার বিবাহ সেকালের এক আলোচ্য বিষয় ছিল। এ বিবাহে রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাণী প্রেরণ করেন ও শরৎচন্দ্ৰ উপস্থিত থাকেন। তাঁর রচিত প্ৰথম ছোটদের নাটক ‘ফুলের আয়না’ নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ষ্টার মঞ্চে প্ৰযোজনা করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ: ভ্ৰমণ-কাহিনী—’রাজপুতের দেশে’, ‘সাহেব-বিবির দেশে’; উপন্যাস-’আকাশ কুসুম’, ‘মানুষের মন’; কিশোর সাহিত্য-’অনেক দিনের কথা’, ‘আনন্দ মেলা’ প্রভৃতি। ১৯৫০ খ্রী. ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স-সহ পশ্চিম ইউরোপ এবং ১৯৫৪ খ্রী রাশিয়া, ফিনল্যান্ড ও চেকোশ্লোভাকিয়া ভ্ৰমণ করেন। তিনি ‘মৌচাক পুরস্কার’ (১৯৬৪), ‘ভুবনেশ্বরী স্বর্ণপদক’ এবং ‘শিশিরকুমার পুরস্কার’ (১৯৭১) লাভ করেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের দু’বার সহ-সভাপতি, বেঙ্গল পিইএন, শিশুসাহিত্য পরিষদ, শরৎ সাহিত্য পরিষদ প্রভৃতির সভাপতি ছিলেন। ক্যালকাটা কেমিক্যাল ও রবীন্দ্ৰ ভারতীর সঙ্গে তার যোগ ছিল।
Leave a Reply