নরেন দত্ত, ক্যাপ্টেন (২১-৯-১৮৮৪ – ৬-৪-১৯৪৯) শ্ৰীকাইল—ত্রিপুরা। কৃষ্ণকুমার। প্ৰখ্যাত ভেষজশিল্প প্ৰতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল ইমিউনিটি কোম্পানী’র সংগঠক ও পরিচালক। পিতা চট্টগ্রামে দরিদ্র স্কুল-শিক্ষক ছিলেন। ক্ষেতমজুরী ও মুদির দোকানে কাজ করে অতিকষ্টে নিম্ন-প্ৰাথমিক ও ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষা পাশ করেন। তারপর কুমিল্লা শহরে এসে ছাত্ৰ পড়িয়ে ও শাকসবজি বিক্রি করে শিক্ষার খরচ যুগিয়ে পড়াশুনা করেন। এফ.এ. পাশ করে ডাক্তারী পড়ার জন্য কলিকাতায় এসে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। খরচ চালাবার জন্য এসময়ে সাধারণত তিনি খিদিরপুর ডকে রাত্ৰিতে ডক-কুলির কাজ করতেন। তার এই উদ্যম ও কষ্টসহিষ্ণুতার কথা ঐ কলেজের অধ্যক্ষ কালভার্ট সাহেব জানতে পেরে তাকে সাহায্য করেন এবং ডাক্তারী পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারই সুপারিশে তিনি প্রথম মহাযুদ্ধে ইমার্জেসী কমিশন পেয়ে আইএম-এস-এর চাকরি পান।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন শিবিরে ৯ বছর কাজ করে প্রচুর অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি দেশে ফেরেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঙালীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ঔষধের কারখানা বেঙ্গল ইমিউনিটি ১৯২৩ – ২৪ খ্রী. নাগাদ সঙ্কটে পড়ে। এই সময় ঋণগ্ৰস্ত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার ভার তিনি স্বহস্তে গ্ৰহণ করে তাকে সুসংগঠিত রূপ দান করেন। বেঙ্গল ইমিউনিটি ছাড়া র্যাডিক্যাল লাইফ ইন্সিওরেন্স কোং লিগ, ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোং লিস্, ইন্ডিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট লি, এবং ভারতী প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং কোং লি প্রভৃতির গঠন ও গঠনকার্যে সহায়তা করেছেন। প্রধান অংশী হয়ে ‘যুগান্তর’ পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ফজলুল হকের ‘নবযুগ’ কাগজ ও ছাপাখানা ক্রয় করে নিয়ে তা পরিচালনা করেন। রাজনীতিক্ষেত্রে চিত্তরঞ্জন দাশের ভক্ত ও সুভাষচন্দ্রের সহচর ছিলেন। সহাধ্যায়ী ডাঃ সুরেশচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে কুমিল্লা অভয় আশ্রমে বহু অর্থ সাহায্য করেছেন। ১৯৪১ খ্রী. গ্রামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ‘নবশক্তি’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। তার অপর কীর্তি ‘বেঙ্গল ইমিউনিটি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’। আইনবিদ কামিনী দত্ত তাঁর অগ্ৰজ। বিপ্লবী কাজে তার সমর্থন ছিল। চট্টগ্রাম বিপ্লবীদেরও তিনি সাহায্য করেছেন।
Leave a Reply