নবকৃষ্ণ দেব (১৭৩৩ – ২২-১১-১৭৯৭) শোভাবাজার-কলিকাতা। রামচরণ। শোভাবাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। পিতার মৃত্যুর পর মাতার যত্নে উর্দু ও ফারসী এবং পরে আরবী ও ইংরেজী শেখেন।
১৭৫০ খ্রী. ওয়ারেন হেস্টিংসের ফারসী ভাষার শিক্ষক নিযুক্ত হন। নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পদচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের অধিকাংশ খবরই তিনি জানতেন এবং এই ষড়যন্ত্রের সমস্ত লেখাপড়া তার দ্বারাই সম্পন্ন হয়েছিল। এরপর তিনি গভর্নর ড্রেকের মুনশী ও ক্রমে পররাষ্ট্র সচিব হন এবং বাঙলাদেশে ইংরেজ প্ৰতিপত্তির অন্যতম প্রধান সহায়ক হয়ে ওঠেন। সিরাজের মৃত্যুর পর গুপ্ত-ধনাগার থেকে নবকৃষ্ণ, মীরজাফর, আমীর বেগ ও রামচাদ রায় আট কোটি টাকার ধনরত্ন প্ৰাপ্ত হন। ১৭৬৬ খ্ৰী. লর্ড ক্লাইভের চেষ্টায় তিনি ‘মহারাজা বাহাদুর’ উপাধি ও ছ’হাজারী মনসবদারের পদ পান। তার অধীনে আরজবেগী দপ্তর, মালখানা, চব্বিশ পরগনার মাল আদালত, তহশীল দপ্তর প্রভৃতি ছিল। পরে কোম্পানীর কমিটির রাজনৈতিক বেনিয়ান হন। তিনি মাতৃশ্ৰাদ্ধে প্ৰায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন। এই উপলক্ষে যে সভা হয়। এবং যেখানে সমবেত অভ্যাগত ও পণ্ডিতগণের আবাসস্থল এবং কঙালীদের জন্য পণ্যবীথিকা সংস্থাপিত হয়, তা থেকে উক্ত অঞ্চলের নামকরণ হয় ‘সভাবাজার’ বা শোভাবাজার (পূর্বনাম-রাসপল্লী)।
১৭৭২ খ্ৰী. ওয়ারেস হেস্টিংস গভর্নর হলে তার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায় এবং ১৭৭৬ খ্রী. সুতানুটির তালুকদারীর সনন্দ ও জাতিমালা কাছারীর ভারপ্রাপ্ত হয়ে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। ১৭৭৬ খ্ৰী. স্বগৃহে গোবিন্দ ও গোপীনাথ বিগ্ৰহ স্থাপন করেন। ‘রাজার জাঙ্গাল’ নামে খ্যাত বেহালা থেকে কুলপি পর্যন্ত ১৬ ক্রোশ রাস্তা এবং বর্তমান রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রীট তারই নির্মিত। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের মত তাঁরও পণ্ডিতসভা ছিল। এই সভার পণ্ডিতদের মধ্যে জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন প্ৰধান ছিলেন। সঙ্গীতজ্ঞ এবং বাদকদেরও তিনি সমাদর করতেন। হরেকৃষ্ণ দীর্ঘাঙ্গী, নিতাই বৈষ্ণব প্রভৃতি কবিয়ালগণ তার সভায় প্রতিপালিত হতেন। জাতিধর্ম-নির্বিশেষে দান করতেন। কলিকাতা মাদ্রাসা কলেজ প্রতিষ্ঠার টাকা এবং সেন্ট জনস চার্চ বা পাথুরে গীর্জার জমি তারই দান।
Leave a Reply