নন্দলাল বসু (১) – অনুমান ১৮৬৪ খ্রী. কলিকাতা থেকে চন্দননগর গিয়ে বসবাস শুরু করেন। ফরাসী ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন। চন্দননগর সেন্ট মেরিস ইনস্টিটিউশন (বর্তমান দুপ্লে কলেজ) ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় বিশেষ সাহায্য করেন। তার রচিত স্কুলপাঠ্য পুস্তক : ‘ফরাসী বর্ণ পরিচয়’ ও ‘ফরাসী ব্যাকরণ’।
নন্দলাল বসু (২) (৩-২-১৮৮৩ – ১৬-৪-১৯৬৬) জেজুর-তারকেশ্বর-হুগলী। পূৰ্ণচন্দ্ৰ। পিতার কর্মস্থল মুঙ্গের-খড়গপুরে জন্ম। দ্বারভাঙ্গায় ছাত্রজীবন শুরু। পরে কলিকাতায় সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশুনা করেন। ছোটবেলায় কুমোরদের দেখাদেখি মূর্তি গড়তেন। ২০ বছর বয়সে এন্ট্রাস পাশ করেন। কলেজের বই কেনার টাকা দিয়ে তিনি সাময়িক পত্র, র্যাফায়েল ও রবিবর্মার ছবি কিনতেন। পিসতুতো ভাই অতুল মিত্র আর্ট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তার পরামর্শে তিনি নিজের আঁকা মৌলিক ও নকল-করা ছবি নিয়ে অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রিন্সিপ্যাল হ্যাভেল সাহেবের সামনে ‘সিদ্ধিদাতা গণেশ’ ঐকে আর্ট স্কুলে প্রবেশাধিকার পান। ছাত্রাবস্থায় আঁকা, উত্তরকালে বিখ্যাত ছবির নাম ‘শোকার্ত সিদ্ধার্থ, ‘সতী’, ‘শিবসতী’, ‘জগাই মাধাই’, ‘কৰ্ণ’, ‘গরুড়স্তম্ভতলে শ্ৰীচৈতন্য’, ‘নটরাজের তাণ্ডব, ‘ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা’ ইত্যাদি। স্কুলে পাঁচ বছর শিখে বৃত্তি লাভ করে আর্ট স্কুলের শিক্ষকতা না নিয়ে, জোড়াসাঁকোয় অবনীন্দ্রনাথের বাড়িতে তিন বছর শিল্পচর্চা করেন। ভগিনী নিবেদিতার বইয়ের চিত্রসজ্জাকর ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের বহু গ্রন্থের চিত্ৰালঙ্কার করেন। ১৯০৮ খ্রী. ভারতীয় প্ৰাচ্য মণ্ডলীর প্রদর্শনীতে ‘শিবসতী’ ছবি একে ৫০০ টাকা পুরস্কার পেয়ে ভারত ভ্ৰমণে বের হন। লেডি হেরিংহ্যামের সহকারিরূপে অজন্তা গুহাচিত্রের নকল করার কাজ করেন (১৯০৯)। ১৯১৪ খ্রী. শান্তিনিকেতনের ব্ৰহ্মাশ্রমে বেড়াতে আসেন। কিছুদিন পরে অবনীন্দ্রনাথের ভারতীয় প্ৰাচ্য কলামণ্ডলীতে ফিরে যান। অবশেষে ১৯২০ খ্রী. থেকে স্থায়ীভাবে শান্তিনিকেতনে বাস করতে আসেন। ১৯২১ খ্রী. গোয়ালিয়রে বাঘগুহার ভিত্তি চিত্রের প্রতিলিপি গ্ৰহণ করেন। ১৯২২ খ্রী. কলাভবনের অধ্যক্ষ হন। ইতোমধ্যে আচার্ জগদীশচন্দ্রের আহ্বানে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ অলঙ্করণ করেন। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত বিচিত্রা ক্লাবে তিনি অন্যতম শিল্পশিক্ষক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে চীন, জাপান ও দ্বীপময় ভারত (সিংহল সমেত) পরিভ্রমণ করেন (১৯২৪)। মহাত্মাজীর আহ্বানে লক্ষ্ণৌ, ফৈজপুর ও হরিপুরায় (১৯৩৫–৩৭) কংগ্রেস অধিবেশন উপলক্ষে ভারতশিল্প প্রদর্শনী সংগঠন করেন। ‘হরিপুরা পট’ নামে বিখ্যাত তাঁর পটগুলি এই সময়ে অঙ্কিত হয়েছিল। কাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডক্টরেট’ (১৯৫২), কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি.লিট’ উপাধি ও দাদাভাই নৌরজী স্মৃতি পুরস্কার প্রাপ্ত হন। রচিত গ্ৰন্থাবলীর মধ্যে ‘শিল্পচর্চা’ ও ‘রূপাবলী’ বিখ্যাত। এককালে অর্থোপার্জনের জন্য কালীঘাটের পটের মত রঙীন পটের সাহায্যে শিল্পসৃষ্টি করে রামায়ণ-কথার রূপ দেন। পরিণত বয়সে (১৯৪৩) বরোদারাজের কীর্তিমন্দির চিত্ৰশোভিত করেন। শ্ৰীনিকেতনে ও শান্তিনিকেতনের গ্রন্থাগারে এবং চীনা ভবনেও শিল্পীর ভিত্তিচিত্ৰ আছে। স্বাধীন ভারতের সংবিধান গ্ৰন্থও নন্দলালের চিত্রে ও নির্দেশে অলঙ্কত। ১৯৫৪ খ্রী. ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধি-ভূষিত হন। ‘উমার ব্যথা’, ‘উমার তপস্যা’, ‘পঞ্চপাণ্ডবের মহাপ্ৰস্থান’, ‘প্রত্যাবর্তন’ প্রভৃতি তাঁর বিশিষ্ট শিল্পীসৃষ্টি।
Leave a Reply