নন্দকুমার রায়, মহারাজ (১৭০৫? – ৫-৮-১৭৭৫) ভদ্রপুর-বীরভূম। পদ্মনাভ। বহরমপুর—মুর্শিদাবাদে মুর্শিদকুলী খাঁর আমিন ছিলেন। ফারসী, সংস্কৃত, বাংলা এবং পিতার রাজস্ব-সংক্রান্ত কাজ শিখে আলীবর্দীর আমলে হিজলি ও মহিষাদল পরগনার রাজস্ব আদায়ের আমীন ও পরে হুগলীর ফৌজদারের দেওয়ান পদে নিযুক্ত হন। সিরাজের রাজত্বকালে তার আচরণ সন্দেহের উর্ধ্বে ছিল না। পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পতনের পর তিনি নানা উচ্চপদে নিযুক্ত হন। বর্ধমানের খাজনা আদায়ের কর্তৃত্ব নিয়ে কোম্পানীর তদানিন্তন রেসিডেন্ট হেস্টিংসের সঙ্গে বিরোধের সূত্রপাত হয়। এই সময় মীরজাফর ইংরেজদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করলে নন্দকুমার সহায়তা করেন। কিন্তু মীরজাফর পদচ্যুত ও মীরকাশিম নবাব হন। এই সময় নন্দকুমার সম্ভবত কারারুদ্ধ হয়েছিলেন।
মীরজাফর দ্বিতীয়বার নবাব হলে মুক্তি পেয়ে দেওয়ান নিযুক্ত হন এবং মীরজাফরের সুপারিশে দিল্লীর বাদশাহ তাকে ‘মহারাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। মীরজাফরের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এই সময় কোম্পানী কর্তৃক নিযুক্ত রেজা খাঁর বিরুদ্ধে বহু অত্যাচারের প্রমাণ সংগ্রহ করে নন্দকুমার এবং অন্যান্যরা বিলাতে দরখাস্ত করেন। ফলে রেজা খাঁ পদচ্যুত হন। কিন্তু নন্দকুমার পূর্বক্ষমতা না পেয়ে হেস্টিংসের উৎকোচ–গ্রহণ ইত্যাদি দুনীতি কোম্পানীর গোচরে আনেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হেস্টিংস প্রতিশোধ নেবার জন্য জঘন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে তাঁর বিরুদ্ধে বুলাকিপ্রসাদ নামে এক ব্যক্তির দলিল জাল করার অভিযোগ করেন। প্ৰধান বিচারপতি ইলাইজা ইম্পে (হেস্টিংসের বন্ধু) আইনের রীতিনীতি পরিত্যাগ করে নন্দকুমারের ফাঁসির আদেশ দেন (১৬-৬-১৭৭৫)। বর্তমান কলিকাতা রেসকোর্সের কাছে কুলীবাজারের মোড়ে এই দণ্ডাজ্ঞা কার্যকরী হয়। ভারতে ইংরেজ শাসনের ইতিহাসে ইংরেজের বেআইনী বিচারের এটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
Leave a Reply