ননীগোপাল মজুমদার (১-১২-১৮৯৭ – ১১-১১-১৯৩৮) দেবরাজপুর—যশোহর। ডাঃ বরদাপ্ৰসন্ন। ১৯২০ খ্ৰী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে প্রথম হয়ে এম.এ. পাশ করেন।
১৯২৩ খ্ৰী. প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি ও গ্রিফিথ পুরস্কার লাভ করেন। গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল প্ৰাচীন খরোষ্টী লিপিমালা। ভারতের ইতিহাসের বহু উপকরণ-সংগ্ৰহ এই লিপির পাঠদ্ধার দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর অধ্যাপনার পর ১৯২৫ খ্ৰী. রাজশাহীর বরেন্দ্ৰ অনুসন্ধান সমিতির অধ্যক্ষ এবং ১৯২৭ খ্রী. ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী কর্মধ্যক্ষ হন। ১৯২৬ খ্রী. স্যার জন মার্শালের অধীনে গবেষণা করেন। ১৯৩০ – ৩১ খ্ৰী. সিন্ধু প্রদেশে জরীপ করে কুড়িটি ভগ্নাবশেষ-বহুল স্থান আবিষ্কার করেন। ১৯৩১ খ্ৰী. তিনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পূর্বাঞ্চলীয় শাখায় স্থানান্তরিত হন।
১৯৩১–৩৫ খ্রী. মধ্যে তিনি হুগলী জেলার মহানাদ নামক স্থানে, বর্ধমান জেলার দেউলিয়া গ্রামে, বগুড়া জেলার অন্তর্গত প্ৰাচীন পৌণ্ডবর্ধনের রাজধানী মহাস্থানগড়ের নিকট গোকুল গ্রামের ‘মেঢ়’ বা ‘লখিন্দরের মেঢ়’ ঢিবিতে ও দিনাজপুরের বাইগ্রামের ‘শিবমণ্ডপ’ ঢিবিতে পুরাতত্ত্বের সন্ধানে খনন-কাৰ্য চালিয়ে গুপ্তযুগের তৈজসপত্রাদি এবং বহু প্ৰাচীন স্থাপত্য ও বিবিধ প্রত্নতত্ত্বসামগ্ৰী উদ্ধার করেন।
১৯৩৭ – ৩৮ খ্রীবর্ধমান জেলার দুর্গাপুর অঞ্চল থেকে প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রস্তরায়ুধের সন্ধান পান। এছাড়া বিহারের চম্পারণ জেলার লেরিয়া-নন্দনগড়ে উৎখনন-কাজ চালিয়ে বহু প্রত্নবস্তু আবিষ্কার করেন। সুপ্রাচীন লিপিমালার পাঠোদ্ধারে ও নির্ভুল ব্যাখ্যায় তার বিশেষ দক্ষতা ছিল। ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে প্ৰকাশিত ‘এপিগ্রাফিক ইণ্ডিকা’ পত্রিকায় এবং ‘ইণ্ডিয়ান হিসটোরিক্যাল কোয়াটারলি’ ও এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায় তিনি উদ্ধারপ্রাপ্ত প্ৰাচীন লিপিতত্ত্বের নিজস্ব ব্যাখ্যা, মন্তব্য ও অনুবাদসহ গবেষণামূলক প্ৰবন্ধাদি প্রকাশ করে দেশীয় ও বিদেশীয় পণ্ডিত-সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। স্যার জন কমিঙস কর্তৃক সম্পাদিত ‘Revealing india’s past’ গ্রন্থের ‘Pre-Historic and Proto-Historic civilization’ শীর্ষক অধ্যায়টি তারই রচনা। তাঁর রচিত ‘Exploration of Sind’ গ্রন্থটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি বিবরণী (memoirs) রূপে ১৯৩৪ খ্রী প্ৰকাশিত হয়। অপর একটি গ্রন্থে তিনি সম্রাট অশোক থেকে শকক্ষত্ৰপ নহপালের সময় পর্যন্ত ব্ৰাহ্মীলিপির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করেন। বাংলা সাময়িক পত্রিকাদিতে তার রচিত বহু প্ৰবন্ধ প্ৰকাশিত হয়েছিল।
১৯২০ খ্রী. এশিয়াটিক সোসাইটির সভ্য ও কিছুদিন কাৰ্যনির্বাহক সমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯৩৬ খ্রী. তার ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৩৫ খ্রী. কলিকাতাস্থ ইণ্ডিয়ান মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মাধ্যক্ষের পদ লাভ করেন। ১৯৩৭ খ্রী. প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের পাটনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনের ইতিহাস শাখার সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩৮ খ্রী. দ্বিতীয়বার সিন্ধুপ্রদেশের দাদু জেলায় অনুসন্ধানের সময় উপজাতীয় হুর দস্যু কর্তৃক নিহত হন।
Leave a Reply