নগেন্দ্ৰপ্ৰসাদ সর্বাধিকারী (২৭-৮-১৮৬৯ – ১৭-১-১৯৪০) রাধানগর-হুগলী। কলিকাতায় জন্ম। পিতা সূৰ্যকুমার ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনে প্রথম ভারতীয় ডীন। ভারতে ফুটবল খেলার জনক ও খ্যাতনামা ক্রিকেটার। মাত্র ১০ বছর বয়সে ময়দানে গোরা সৈন্যদের ফুটবল খেলা দেখে আকৃষ্ট হন ও হেয়ার স্কুলে তাঁর সহপাঠীদের নিয়ে একটি দল তৈরি করে খেলা শুরু করেন। এর মাত্র দু’বছর আগে ১৮৭৭ খ্ৰী. ইংরেজ সৈন্যরা সর্বপ্রথম গড়ের মাঠে ফুটবল খেলার প্ৰচলন করে। প্রেসিডেন্সী কলেজের অধ্যাপক মিঃ স্ট্যাক তার উৎসাহ দেখে খেলার শিক্ষা দেন। বয়েজ ক্লাব, ফ্রেন্ডস ক্লাব, ওয়েলিংটন ক্লাব, হাওড়া স্পোটিং ক্লাব, প্রেসিডেন্সী ক্লাব প্রভৃতির তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। এসব ক্লাবে জাতিধর্মনির্বিশেষে সকলেই সভ্য হতে পারত। প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ার সময় তিনি ময়দানে সবরকম খেলাধুলার নেতৃত্ব দিতেন। অল্পকালের মধ্যেই বাঙলার অদ্বিতীয় সেন্টার ফরওয়ার্ড-রূপে খ্যাতিলাভ করেন। এ সময় তিনি জেলায় জেলায় ক্লাব সংগঠন করতে থাকেন। তার প্রতিষ্ঠিত ওয়েলিংটন ক্লাবই গড়ের মাঠে দেশীয় ব্যক্তিদের প্রথম খেলার তাবু। এই ক্লাবে ফুটবল, ক্রিকেট, রাগবী, হকি ও টেনিস খেলার ব্যবস্থা করেন। তিনিই প্ৰথম ভারতীয় বোলার যিনি ইংরেজদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় ওভার-হেড বোলিং করতে পারতেন। প্রখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় মোনা বোস ও সুধন্বা বোস তাঁর শিষ্য। বাঙালী যুবকদের নিয়ে রাগবী টীম তিনিই প্ৰথম গঠন করেন; তবে এক দুর্ঘটনার কারণে ক্লাব থেকে এ খেলা উঠিয়ে দেন। বয়েজ স্পোটিং ক্লাবে হকি ও টেনিস খেলার প্রবর্তন করেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি পথিকৃৎ। তখন বাঙালী খেলোয়াড়রা খালি পায়ে খেললেও তিনিই শুধু বুট পরে খেলতেন। বিদেশী খেলার প্রবর্তক হলেও দেশী খেলাতেও উৎসাহী ছিলেন। শোভাবাজারের রাজা আনন্দকৃষ্ণ দেবের কন্যার সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৮৭ খ্রী. স্থাপিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শোভাবাজার ক্লাবের তিনি প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। তার চেষ্টায় কামার, ছুতোর ও অন্যান্য শ্রমজীবী শ্রেণীর যুবকেরা বাবুদের ছেলেদের সঙ্গে মিলেমিশে শারীরবিদ্যা-চৰ্চায় যোগ দেবার সুবিধা পায়। ওয়েলিংটন ক্লাবে এই বিষয়ে আপত্তি ওঠায় তিনি ক্লাব ভেঙ্গে দেন। তারই চেষ্টায় ক্রিকেটে ‘হ্যারিসন শীল্ড প্রতিযোগিতা’ প্রবর্তিত হয় এবং সাহেবদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ক্লাবে দেশীয়দের প্রতিযোগিতা করার পথ উন্মুক্ত হয়। ১৮৮৩ খ্রী. ভারতীয়দের নিয়ে কলিকাতায় বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আইএফ-এ শীল্ড গঠনে উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একমাত্র এ দেশীয়। ১৮৯২ খ্রী. শোভাবাজার ক্লাব সমস্ত ইউরোপীয় ক্লাবকে পরাজিত করে ফ্রেন্ডস কাপ জয় করে। সেই বছরই আইএফ-এ র শীল্ড খেলা হয়। ১৮৭৭–১৯০২ খ্রী. অবধি তিনি ৭০০-র বেশী ম্যাচ খেলেছেন। দর্শক ও খেলোয়াড়দের কাছে তিনি ‘হুজুর’ নামে পরিচিত ছিলেন। বাঙালী যুবকদের সামরিক ও আধা-সামরিক শিক্ষা দেবার জন্য ছাত্রাবস্থা থেকেই চেষ্টা শুরু করেন এবং তার ও তাঁর বন্ধুদের চেষ্টায় প্রথম মহাযুদ্ধের সময় বাঙালী পল্টন গঠিত হয়। ইংরেজী ও সংস্কৃত ভাল জানতেন। কবি, সাহিত্যরসিক, নাট্যকার ও নাট্যসমালোচক ছিলেন। শেকসপীয়রের Tempest ও Merchant of Venice সাবলীল ভাষায় অনুবাদ করেন। হিন্দুধৰ্মশাস্ত্রে ও তন্ত্রশাস্ত্রে তাঁর প্রগাঢ় জ্ঞান ছিল। কীর্তন গানেও পারদর্শী ছিলেন। তার অনুজ বিনয়েন্দ্ৰ প্ৰথম ভারতীয় টেনিস চ্যাম্পিয়ন। ইংল্যান্ড, আয়ার্ল্যান্ড এবং ওয়েলসের ‘মের্সনিক লজ’-এর সর্বোচ্চ সম্মানপ্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় ডাঃ সত্যপ্ৰসাদ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ৰথম নন-অফিসিয়াল ভাইস-চ্যান্সেলর দেবপ্ৰসাদ এবং কর্নেল সুরেশপ্রসাদ তার অগ্ৰজ।
পূর্ববর্তী:
« নগেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
« নগেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
পরবর্তী:
নগেন্দ্ৰবালা মুস্তোফী »
নগেন্দ্ৰবালা মুস্তোফী »
Leave a Reply