নগেন্দ্রনাথ বসু, প্ৰাচ্যবিদ্যামহার্ণব (৬-৭-১৮৬৬ – অক্টো ১৯৩৮) কলিকাতা। আদি নিবাস মাহেশ-হুগলী নীলরতন। বাংলা সাহিত্যে তার সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান ‘বিশ্বকোষ’ (২২ খণ্ডে) ও ‘বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস’ সঙ্কলন। দীর্ঘ ২৭ বছর পরিশ্রমের পর ১৩১৮ ব বিশ্বকোষের শেষ খণ্ড প্ৰকাশিত হয়। ‘বিশ্বকোষ’ গ্রন্থটি আরম্ভ করেন সাহিত্যসেবী রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায় এবং প্ৰথম খণ্ড সম্পাদনা করেন তার ভ্ৰাতা ত্ৰৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। প্রথম জীবনে বেনামীতে কবিতা লিখতেন। ঐ সময়ে ‘তপস্বিনী’ ও ‘ভারত’ মাসিক পত্রিকার সম্পাদনা শুরু করেন। বিহারীলাল সরকারের আগ্রহে ‘দর্জিপাড়া থিয়েট্রিক্যাল ক্লাবে’র জন্য ‘শঙ্করাচার্য’, ‘পার্শ্বনাথ’, ‘হরিরাজ’, ‘লাউসেন’ প্রভৃতি কয়েকটি পদ্যগদ্যময় নাটক রচনা এবং শেক্সপীয়রের ‘হ্যামলেট’ ও ‘ম্যাকবেথ’ অনুবাদ করেন। ম্যাকবেথের অনুবাদ ‘কৰ্ণবীর’ নামে প্রকাশিত হয়। ১৮৮৪ খ্ৰী. ইংরেজী ও বাংলায় ‘শব্দেন্দু মহাকোষ’ নামে অভিধান প্ৰকাশ শুরু হলে তিনিই সর্বপ্রথম তার সঙ্কলনভার গ্ৰহণ করেন। এই কাজের মাধ্যমে আনন্দকৃষ্ণ বসু ও হরপ্রসাদ। শাস্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত এবং তাদের প্রভাবে এশিয়াটিক সোসাইটির সভ্য হন। ১৮৯৪ খ্ৰী এশিয়াটিক সোসাইটির সভায় বাঙলার বহু ঐতিহাসিক তথ্য সম্বন্ধে প্রবন্ধাবলী পাঠ করেন। পরে এইগুলি প্রকাশিত হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক উপকরণ সংগ্রহের জন্য তিনি নানা স্থানে, বিশেষত ওড়িশার অনেক তীর্থ ও দুৰ্গম অঞ্চলে গিয়ে বহু শিলালিপি, তাম্রশাসন ও প্রাচীন পুথি সংগ্রহ করেন এবং ঐ সকল স্থানের প্রাচীন ইতিহাস বিষয়ে এবং ‘নাগরাক্ষর উৎপত্তি’ নামে বিস্তৃত ও তথ্যপূর্ণ প্রবন্ধ লেখেন। শুশুনিয়া প্রত্নলিপি, মদনপালের অনুশাসন ইত্যাদি পাঠোদ্ধার ও প্ৰকাশ করেন। বহুদিন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের মুখপত্র ‘সাহিত্য-পরিষৎ পত্রিকা’র সম্পাদক ছিলেন এবং উক্ত পরিষদের পক্ষ থেকে পীতাম্বর দাসের ‘রাসমঞ্জরী’, জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’, চণ্ডীদাসের অপ্ৰকাশিত পদাবলী, জয়নারায়ণের ‘কাশী-পরিক্রমা’, ভাগবতাচার্যের ‘কৃষ্ণপ্ৰেমতরঙ্গিণী’ প্রভৃতি প্ৰাচীন গ্রন্থাদির সম্পাদনা করেন। তার ব্যক্তিগত পুথি সংগ্ৰহ সম্বল করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ শুরু হয়। রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : ‘কায়স্থের বর্ণনির্ণয়’, ‘শূন্যপূরাণ’, ‘Archaeological Survey of Mayurbhanj’, ‘Modern Buddhism and its Followers in Orissa’, ‘Social History of Kamrup’ প্রভৃতি। এশিয়াটিক সোসাইটির ফিলোলজিক্যাল কমিটির সভ্য, কায়স্থসভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘কায়স্থ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ভারতীয় পুরাতত্ত্বে অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ‘প্ৰাচ্যবিদ্যামহার্ণব’ উপাধি দ্বারা সম্মানিত হন।
পূর্ববর্তী:
« নগেন্দ্রনাথ দত্ত
« নগেন্দ্রনাথ দত্ত
পরবর্তী:
নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য »
নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য »
Leave a Reply