দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১১-৩-১৮৪০ – ১৯-১-১৯২৬) কলিকাতা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। বাল্যশিক্ষা প্ৰধানত স্বগৃহে; পরে সেন্ট পলস স্কুল ও হিন্দু কলেজেও ভর্তি হন, কিন্তু পাঠ শেষ করেন নি। এই আত্মভোলা মানুষটির সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন কাব্যচর্চা, জ্ঞানসাধনা এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। তিনি একাধারে কবি, গণিতজ্ঞ, দার্শনিক এবং বাংলায় শর্টহ্যান্ড (কবিতাকারে) ও স্বরলিপির উদ্ভাবক। সমকালীন মাসিকপত্র ‘তত্ত্ববোধিনী’, ‘ভারতী’, ‘সাধনা’, নবপর্যায়ের ‘বঙ্গদর্শন’, ‘সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা’ প্রভৃতিতে তার বহু রচনা বিক্ষিপ্ত আকারে ছড়িয়ে আছে। তিনিই সর্বপ্রথম বাংলায় ‘মেঘদূত’ কাব্যগ্রন্থ অনুবাদ করেন (১৮৬০)। তার ‘স্বপ্নপ্ৰয়াণ’ কাব্যগ্রন্থ (১৮৭৫) বাংলা সাহিত্যে এক অনন্যসাধারণ সংযোজন। দার্শনিক গ্ৰন্থ রচনায়ও তিনি ছিলেন সবার অগ্রণী। ‘তত্ত্ববিদ্যা’ (৩ খণ্ড) তার উল্লেখযোগ্য দর্শনগ্রন্থ। বেদান্তের ওপর লেখা তার ‘অদ্বৈত মতের সমালোচনা’ ১৮৯৬ খ্রী. প্ৰকাশিত হয়। ‘আর্যধর্ম’ ও ‘সংঘাত’ তার অপর দুখানি গ্ৰন্থ। রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই জ্যেষ্ঠাগ্রজ সম্বন্ধে লিখেছেন ‘…স্বপ্নপ্রয়াণের কত পরিত্যক্ত পত্র বাড়িময় ছড়াছড়ি যাইত তাহার ঠিকানা নাই। বড়দাদার কবিকল্পনার এত প্রচুর প্রাণশক্তি ছিল যে তাহার যতটা আবশ্যক তার চেয়ে তিনি ফলাইতেন অনেক বেশী। এইজন্য তিনি বিস্তর লেখা ফেলিয়া দিতেন। সেইগুলি কুড়াইয়া রাখিলে বঙ্গ সাহিত্যের একটি সাজি ভরিয়া তোলা যাইত।’ ‘ভারতী’ ও ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার’ সম্পাদক ছিলেন। বাক্স-নির্মাণ সম্পর্কে ১৯১৩ খ্রী. ‘বক্সোমেট্রি’ নামে একটি বই লেখেন। নবগোপাল মিত্রের চৈত্র (পরে হিন্দু) মেলায় সোৎসাহে যোগ দেন (১২-৪-১৮৬৭)। কিছুদিন হিন্দু মেলার সম্পাদকও ছিলেন। এই উপলক্ষে স্বদেশী সঙ্গীত রচনা করেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের তিনবার সভাপতি ও সাহিত্য সম্মেলনের ৭ম অধিবেশনে (১৯১৩ খ্রীঃ) মূল সভাপতি হন। ন্যাশনাল সোসাইটির অন্যতম প্ৰতিষ্ঠাতা, ‘বিদ্বজ্জনসমাগম’ নামক সাহিত্যসভার উদ্যোক্তা এবং বাংলায় বিজ্ঞান-প্রচারে উৎসাহী ছিলেন। গান্ধীজী ও দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিলেন। আদি ব্ৰাহ্মসমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর জোড়াসাঁকোর বাড়ি ছেড়ে শান্তিনিকেতনে গিয়ে আমৃত্যু সেখানে কাটান।
পূর্ববর্তী:
« দ্বিজেন শর্মা
« দ্বিজেন শর্মা
পরবর্তী:
দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু »
দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু »
Leave a Reply