দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রিন্স (১৭৯৪ – ১.৮.১৮৪৬) কলিকাতা। রামমণি। জ্যেষ্ঠতাত রামলোচনের দত্তক পুত্র। শিক্ষক শেরবোর্ন সাহেবের স্কুলে ও উইলিয়ম অ্যাডামসের নিকট ইংরেজী শিক্ষা করেন। ফরাসী ভাষাও জানতেন। পৈতৃক সম্পত্তি ছাড়া নিজেও নূতন নূতন জমিদারী ক্রয় করেছিলেন। ব্যবহারশাস্ত্ৰ আয়ত্ত করে আইন ব্যবসায় শুরু করেন। সরকার কর্তৃক ১৮২৩ খ্ৰী চব্বিশ পরগনার নিমক মহলের কালেক্টরের দেওয়ানের পদে নিযুক্ত হন। ছয় বৎসর পরে তিনি শুষ্ক, লবণ ও অহিফেন বোর্ডের দেওয়ানের পদ লাভ করেন। দেওয়ানের পদে নিযুক্ত থাকাকালেই তিনি স্বাধীন ব্যবসায়ে লিপ্ত ছিলেন। ম্যাকিনটস অ্যান্ড কোং-র অংশীদার ও কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কের পরিচালক ছিলেন। ৭-৮-১৮২৯ খ্রী. নিজে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৪-৭-১৮৩১ খ্রী. ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের অন্যতম ডিরেক্টর হন। কয়েকটি বীমা কোম্পানীরও পরিচালক ছিলেন। ১৮৩৪ খ্রী. সরকারী কাজ ছেড়ে দেন এবং কার ও ঠাকুর কোম্পানীর যুগ্ম মালিকানায় ইংরেজী রীতি-পদ্ধতিতে ব্যবসায়ের চেষ্টা করেন। রেশম ও নীল রপ্তানি করে, কয়লাখনি কিনে, জাহাজী ব্যবসায়ের পত্তন করে, চিনির কল স্থাপন করে একজন বিখ্যাত ধনী শিল্পপতি ও সমাজের প্রধান ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। এদেশে শর্করা-উৎপাদনে বাষ্পীয় যন্ত্র ব্যবহারের তিনিই প্রবর্তক। জাহাজ-ব্যবসায় শুরু করে বহু মালবাহী জাহাজ ও ‘দ্বারকানাথ’ নামে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করেন। তার মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যায়। রাজা রামমোহনের বন্ধু ও সঙ্গী এবং ব্ৰাহ্মসমাজের সমর্থক হিসাবে সতীদাহ-রদ আইনের জন্য লর্ড বেন্টিঙ্ককে অভিনন্দন জানান। রামমোহনের আত্মীয়-সভার একজন সভ্য ও তৎপ্রতিষ্ঠিত অ্যাংলো-হিন্দু স্কুলের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৮৩৩ খ্রী. থেকে আমৃত্যু হিন্দু কলেজের পরিচালক এবং বাংলার মাধ্যমে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে হিন্দু স্কুলের অধীনে ‘বাংলা পাঠশালা’ (১৮-১-১৮৪০) প্রতিষ্ঠায় অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ডিস্ট্রিক্ট চ্যারিট্যাবল সোসাইটিতে লক্ষ টাকা দান করেন। মেডিক্যাল কলেজে সর্বোৎকৃষ্ট ছাত্রদের পারিতোষিকের ব্যবস্থা করেন। ১৮৩৫ খ্ৰী. ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরী প্ৰতিষ্ঠারও তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা। কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও জমিদার-সভা স্থাপনে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন। ১৮৩৮ খ্রী. টাউন হলে ব্ল্যাক অ্যাক্ট সংক্রান্ত জনসভার অন্যতম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৮৪২ খ্রী. ব্যবসায়-সংক্রান্ত ব্যাপারে বিলাত যান। পথে রোমের পোপ ও প্রুশিয়ার যুবরাজ কর্তৃক সংবর্ধিত হন। ১৬ই জুন মহারাণী ভিক্টোরিয়ার দরবারে উপস্থিত হয়ে এক সপ্তাহ পরে রাজপ্ৰসাদে নিমন্ত্রিত হন। এখানে তার রাজকীয় আড়ম্বর ও ঐশ্বর্যপূর্ণ জীবনযাত্রা দেখে সম্রান্ত ইংরেজগণ তাকে ‘প্ৰিন্স’ বলতেন। ঐ বছরের শেষে দেশে ফেরার পথে ফরাসী রাজদরবারে সংবর্ধিত হন। দেশে ফিরলে হিন্দু সমাজ সমুদ্রযাত্রার অপরাধে প্ৰায়শ্চিত্তের দাবি তুললে তিনি অস্বীকার করেন। এরপর মিঃ ক্যাম্বেল নামে ইংরেজের সহযোগিতায় বেঙ্গল কোল কোং স্থাপন করেন। এর আগেই ইউরোপীয়ানদের প্রতিষ্ঠিত ক্যালকাটা চেম্বার্স অফ কমার্সের পরিচালক-সদস্য নির্বাচিত হন। ‘বেঙ্গল হরকরা’, ‘বেঙ্গল হেরাল্ড’, ‘বঙ্গদূত’ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর মালিকানা ছিল। ‘ইংলিশম্যান’ পত্রিকাতেও অর্থসাহায্য করেন। প্ৰথম গ্র্যান্ড জুরীদের অন্যতম এবং একজন ‘জাস্টিস অফ দি পীস’ ছিলেন। দ্বিতীয়বার বিলাত যাত্রার সময় (৮-৩–১৮৪৫) চারজন মেডিক্যাল ছাত্রকে উচ্চশিক্ষাদানের জন্য সঙ্গে নিয়ে যান। তাদের মধ্যে দুজন-ভোলানাথ বসু ও গোপাললাল শীল তারই আর্থিক সাহায্যে পড়াশুনা করেন। লন্ডন শহরে মৃত্যু। কেনসাস গ্ৰীন গীর্জায় তার শবদেহ সমাহিত করা হয়।
পূর্ববর্তী:
« দ্বারকানাথ ঘোষ
« দ্বারকানাথ ঘোষ
পরবর্তী:
দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ »
দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ »
Leave a Reply