দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় (২০-৪-১৮৪৪ – ২৭-৬-১৮৯৮) মাগুরখণ্ড-বিক্রমপুর-ঢাকা। কৃষ্ণপাণ। ছাত্রাবস্থা থেকেই সমাজসংস্কারমূলক আন্দোলনে যোগ দেন। প্ৰবেশিকা পরীক্ষায় অকৃতকাৰ্য হলে গ্রাম ত্যাগ করে লোনসিং (ফরিদপুর) গ্রামে শিক্ষকতা-কার্যে ব্ৰতী হন। সেখান থেকে ১৮৬৯ খ্রী. ‘অবলাবান্ধব’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমাজসংস্কারের চেষ্টা করেন। ১৮৭০ খ্রী. ব্ৰাহ্ম-সংস্কারকদের আমন্ত্রণে তিনি কলিকাতায় আসেন এবং স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তার ও অসহায় নারীদের রক্ষাকার্যে আত্মনিয়োগ করেন। ১৮-৯-১৮৭৩ খ্রী. ‘হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়’ স্থাপনে এবং ছাত্রীনিবাস প্রতিষ্ঠায় প্রধান উদ্যোগী ও এ বিদ্যালয়ের অন্যতম শিক্ষক ছিলেন। বিদ্যালয়টি আড়াই বছর পরে উঠে গেলে ১-৬-১৮৭৬ খ্রী. ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্কুলের সূত্রেই মহিলা ছাত্রীদের প্রবেশিকা পরীক্ষা দান ও মহিলাদের মেডিক্যাল কলেজে প্রবেশাধিকার বিষয়ের আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। ১-৮-১৮৭৮ খ্রী উক্ত স্কুলটি বেথুন স্কুলের সঙ্গে মিশে যায়। তার এইসব কাজে সহযোগী ছিলেন শিবনাথ শাস্ত্রী, দুৰ্গামোহন দাস, আনন্দমোহন বসু, অন্নদাচরণ খাস্তগীর প্রমুখ নেতৃবর্গ। ‘ব্ৰাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়’কে বহু অর্থ সাহায্য করেন। কলিকাতায় ব্ৰাহ্মনেতা কেশবচন্দ্রের দলে থাকলেও ‘কুচবিহার বিবাহ’ উপলক্ষে ‘সমালোচক’ পত্রিকার সম্পাদকরূপে তাতে তীব্ৰ সমালোচনা করেন। ১৮৭৮ খ্রী. সাধারণ ব্ৰাহ্মসমাজ প্ৰতিষ্ঠায়ও তিনি অগ্রণী ছিলেন। স্ত্রী-জাতির সপক্ষে আন্দোলনের নেতারূপে সমাজে তার ‘অবলাবান্ধব’ উপাধি চালু ছিল। প্ৰথমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৮৮৩ খ্রী. কাদম্বিনী বসুকে (প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট) বিবাহ করেন। রাজনীতিক্ষেত্রে তিনি ছাত্রসমাজ, ভারত-সভা এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কংগ্রেসে তিনি মহিলাদের প্রতিনিধিত্বের দাবি করেন। ফলে কাদম্বিনীর নেতৃত্বে ১৮৮৯ খ্রী. প্রথম মহিলাদল কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে যোগ দেন। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় শ্রমিক আন্দোলনের পরিচালকরূপে। আসামের চা-বাগানের শ্রমিকদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখেন ও ইউরোপীয় মালিকদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের খবর তার প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সঞ্জীবনী’তে প্ৰকাশ করেন। ফলে আন্দোলন শুরু হয়। রচিত উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : ‘বীর নারী’ (নাটক), ‘কবিগাঁথা’, ‘নববার্ষিকী’, ‘জীবনালেখ্য, ‘সুরুচির কুটির’ (উপন্যাস) প্রভৃতি; সঙ্কলন গ্ৰন্থ : ‘জাতীয় সঙ্গীত’। ‘না জাগিলে সব ভারত ললনা/এ ভারত আর জাগে না জাগে না’-এই বিখ্যাত গানটি তারই রচিত। ‘সরল পাটীগণিত’, ‘ভূগোল’, ‘স্বাস্থ্যতত্ত্ব’ প্রভৃতি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকও তিনি রচনা করেছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« দ্বারকানাথ অধিকারী
« দ্বারকানাথ অধিকারী
পরবর্তী:
দ্বারকানাথ গুপ্ত »
দ্বারকানাথ গুপ্ত »
Leave a Reply