দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী (১৮৯৮! – ১৪-১০-১৯৭৫) ভবানীপুর কলিকাতা উমাপ্রসাদ। খ্যাতনামা ভাস্কৰ্য-শিল্পী। তাঁর কমনৈপুণ্যে পরাধীন দেশে ইউরোপীয় ভাস্করদের একচেটিয়া আধিপত্য ক্ষুন্ন হয়েছিল। ব্রোঞ্জমূর্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান আছে। সম্পদশালী পরিবারে জন্ম। হিরন্ময় রায়চৌধুরী ও একজন ইটালিয়ান সাহেবই ছিলেন তার শিক্ষাগুরু। তার ছবি আঁকার হাতেখড়ি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে হলেও তিনি শিল্পগুরুর প্রবর্তিত বেঙ্গল স্কুলের প্রভাব ছিন্ন করে পাশ্চাত্যের বাস্তবধর্মী শিল্পকর্মকে গ্ৰহণ করেন। তার ভাস্কর্যেও ‘রিয়ালিজম’-এর শিল্পরূপ প্ৰাধান্য পেয়েছে। মাদ্রাজ আট কলেজে দীর্ঘ ২৮ বছর অধ্যক্ষ-পদে এবং ললিতকলা আকাদামির চেয়ারম্যান-পদে ৭ বছর অতিবাহিত করার পর তিনি কলিকাতায় ফিরে আসেন। ১৯৫৫ খ্রী টোকিওতে শিল্পসংক্রান্ত আলোচনাচক্রে তিনি ছিলেন সভাপতি ও ডাইরেক্টর। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জাতীয় আধুনিক ভাস্কর্যশিল্প প্রদর্শনীতে তিনি প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৮ খ্রী. ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি-ভূষিত হন। উল্লেখযোগ্য ভাস্কৰ্য-শিল্প : পাটনায় ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, মাদ্রাজে ‘ট্রাইঅ্যামফ অব লেবার’ বা ‘শ্রমের জয়যাত্রা’, ত্ৰিবান্দ্রমে ‘টেম্পল এনট্র প্রোক্লামেশন’, কলিকাতায় ‘মাহাত্মা গান্ধীর মূর্তি’, ‘স্যার আশুতোষ মুখার্জির মূর্তি’ প্রভৃতি। শিল্পীর অসংখ্য কাজের মধ্যে তার শেষ কাজ ভারতের বিভিন্ন জাতি এবং বিভিন্ন ধর্মের প্রতীক বিরাট বিরাট একাদশ মূর্তি। তাঁর আঁকা ‘সুমাত্রা দ্বীপের পাখী’ ছবিখানি সম্রাট পঞ্চম জর্জের পত্নী রানী মেরী বহু টাকার বিনিময়ে কিনেছিলেন। তিনি কার্টুনও আঁকতেন। লেখক হিসাবেও পরিচিতি ছিল। তার লেখাগুলির মধ্যে ‘জিনিয়াস’, ‘বল্লভপুরের মাঠ’, ‘পিশাচ’, ‘রিক্সাওয়ালা’ এবং ‘পোড়োবাড়ি’ উল্লেখযোগ্য। ভাল বাঁশি বাজাতে পারতেন। কুস্তিতেও চৌকস ছিলেন। নৃত্যশিল্পী ভাস্কর তার পুত্র।
পূর্ববর্তী:
« দেবীপ্রসাদ মুনশী
« দেবীপ্রসাদ মুনশী
পরবর্তী:
দেবীবর ঘটক, বন্দ্যোপাধ্যায় »
দেবীবর ঘটক, বন্দ্যোপাধ্যায় »
Leave a Reply