দেউস্কর, সখারাম গণেশ (১৭-১২-১৮৬৯ – ২৩-১১-১৯১২) করো— (তৎকালীন) বীরভূম। সদাশিব গণেশ। দেউস্কর পরিবারের আদি নিবাস মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলার মালবর্ন দুর্গের কাছে দেউস গ্রামে। বর্তমান বিহারের দেওঘরের কাছে করো গ্রামে তিন পুরুষের বাস। পাঁচ বছর বয়সে তার মাতৃবিয়োগ হলে বিদুষী পিসী কর্তৃক লালিত হন। রীতি অনুসারে উপনয়নের পর কিছুদিন বেদ পাঠ করেন। ১৮৮৯ খ্রী. বৈদ্যনাথ ইংরেজী স্কুলে ভর্তি হন। সাহিত্যসেবী যোগীন্দ্রনাথ বসু সে সময়ে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৮৯১ খ্রী ঐ স্কুলেই শিক্ষকতা করেন। সাহিত্যানুরাগের জন্য রাজনারায়ণ বসুর কাছে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষাগ্ৰহণ করেন। এই সময় থেকেই রচনা প্ৰকাশ আরম্ভ। ‘হিতবাদী’ পত্রিকার লেখক ছিলেন। ম্যাজিষ্ট্রেট হার্ভের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জন্য যোগীন্দ্রনাথ ও তিনি কর্মচ্যুত এবং পরে কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ কর্তৃক পুনর্বহাল হন। ‘হিতবাদী’ পত্রিকায় প্রুফরীডার হয়ে ঢুকলেও ক্রমে অধ্যবসায়বলে সম্পাদকের প্রধান সহকারী হয়ে ওঠেন। ৪-৭-১৯০৭ খ্ৰী. কালীপ্রসম্নের মৃত্যুর পর ‘হিতবাদী’র সম্পাদক হন। এই বছর সুরাট কংগ্রেসে চরম ও নরমপন্থীদের সংঘর্ষ হয়। ‘হিতবাদী’র মালিকগোষ্ঠী চরমপন্থীদের তথা তিলকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লিখবার আদেশ দিলে, বিপ্লবপস্থায় বিশ্বাসী সখারাম পদত্যাগ করেন। অতঃপর জাতীয় শিক্ষা পরিষদ পরিচালিত বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও ভারতীয় ইতিহাসের শিক্ষক নিযুক্ত হন। ইংরেজের শোষণের বিরুদ্ধে তার রচিত ‘দেশের কথা’ বাজেয়াপ্ত হলে স্কুল-কর্তৃপক্ষীয়দের শঙ্কিত দেখে ১৯১০ খ্ৰী. পদত্যাগ করেন। আবার কিছুদিন হিতবাদী সম্পাদনা করেন। এই সময় একমাত্র পুত্র ও পত্নীর মৃত্যুর পর স্বাস্থ্যভঙ্গ হলে স্বগ্রামে ফিরে যান। প্ৰধানত তারই চেষ্টায় বাঙলাদেশে শিবাজী উৎসব এবং ভবানী পূজা প্রবর্তিত হয়। মহামান্য তিলক রাজদ্বারে অভিযুক্ত হলে তারই চেষ্টায় বঙ্গবাসিগণ তিলকের সাহায্যে অগ্রসর হন। ‘দেশের কথা’ গ্রন্থটি বহুদিন ভারতীয় বিপ্লবীদের অবশ্য-পাঠ্য ছিল। এটি বাজেয়াপ্ত হবার আগেই ৫টি সংস্করণে ১৩ হাজার কপি বিক্রীত হয়। বাজেয়াপ্ত হবার পরও গোপনে গ্রন্থটি পড়া হত। ‘দেশের কথা’ বহু ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়। এছাড়া শিবাজীর জীবন সম্পর্কেও বহু মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করেন। রচিত অন্যান্য গ্ৰন্থ ‘তিলকের মকদ্দমা’, ‘বাজীরাও’, ‘এটা কোন যুগ’, ‘ঝান্সির রাজকুমার’, ‘মহামতি রাণাডে’, ‘আনন্দীবাঈ’ প্ৰভৃতি।
পূর্ববর্তী:
« দুৰ্গাসুন্দর কৃতিরত্ন
« দুৰ্গাসুন্দর কৃতিরত্ন
পরবর্তী:
দেওয়ান আব্দুর রশিদ চিশতী »
দেওয়ান আব্দুর রশিদ চিশতী »
Leave a Reply