দুর্গামোহন দাশ (নভে ১৮৪১ – ডিসে ১৮৯৭) তেলিরবাগ—ঢাকা। কাশীশ্বর। পিতার কর্মক্ষেত্র বরিশালে অবস্থানকালে চৌদ্দ বছর বয়সে প্রদর্শনী বৃত্তি পেয়ে কলিকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়া শুরু করেন। ১৮৬১ খ্রীঃ আইনের প্রথম পরীক্ষা (Licentiate of Law) পাশ করে কলিকাতা সদর আদালতে ব্যবসায় আরম্ভ করেন আইন ব্যবসায় আরম্ভ করেন। ১৮৬১ খ্রী বরিশালে গিয়ে সরকারী উকিল হন। ১৮৭০ খ্রী. কলিকাতায় এসে ওকালতি শুরু করে ক্রমে লব্ধপ্ৰতিষ্ঠ হন। সংস্কারপন্থী ছিলেন। ১২৭১ ব. প্রধানত তার চেষ্টায় বরিশালে দুটি কায়স্থ বালবিধবার পুনর্বিবাহ হয়। পূর্ববঙ্গে এই প্রচেষ্টা প্ৰথম। এই কাজের জন্য তাকে বহু সামাজিক ও আর্থিক পীড়ন সহ্য করতে হয়। পরে তার চেষ্টায় বরিশালে আরও কয়েকটি বিধবার বিবাহ হয়। পিতার মৃত্যুর পর তিনি অল্পবয়স্ক বিধবা বিমাতারও পুনরায় বিবাহ দিয়েছিলেন। নিজেও বিপত্নীক হওয়ার পর অতুলপ্রসাদ সেনের বিধবা মাতাকে বিবাহ করেন। ঈশ্বরচন্দ্ৰ ভিন্ন আর কেউ বাঙলাদেশে বিধবা-বিবাহ প্ৰচলনের জন্য এত অর্থব্যয় করেননি। প্ৰধানত তারই চেষ্টায় ও অর্থসাহায্যে বরিশাল ব্ৰাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। কলিকাতার নব্য ব্ৰাহ্মদের একটি ক্ষুদ্র দলের তিনি নেতৃস্থানীয় ছিলেন। ১৮৭২ খ্রী. তিন আইন বিধিবদ্ধ হলে ঐরাপ বিবাহসম্পাদন-কার্যের অন্যতম ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী (Registrar) নিযুক্ত হন। সাধারণ ব্ৰাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন। কলিকাতায় আনন্দমোহন বসু, দ্বারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, শিবনাথ শাস্ত্রী প্ৰমুখদের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্ত্রীশিক্ষা ও নারীজাতির উন্নতিবিধানে যত্নবান হন। উদ্ধারপ্রাপ্ত বাল্যবিধবা ও কুলীন কন্যাদের নিজগৃহে আশ্রয় দিতেন। এইসব বালিকার শিক্ষার জন্য ১৩-৯-১৮৭৩ খ্রী. ‘হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়’ এবং এটি বন্ধ হয়ে গেলে ১-৬-১৮৭৬ খ্রী. ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ তাদের মিলিত চেষতায় স্থাপিত হয়। আশ্রিতাদের শিক্ষার জন্য মুক্তহস্তে সাহায্য করতেন। ১৮৭৬ খ্রী. কলিকাতা পৌরসভার সদস্য হন। ভারত-সভার তিনি অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার পুত্রদের মধ্যে এস. আর. দাশ ও বিচারপতি জ্যোতিষরঞ্জনের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। প্ৰসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক আচার্য জগদীশচন্দ্র ও দার্শনিক পণ্ডিত প্ৰসন্নকুমার রায় তার জামাতাদ্বয় এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন তাঁর ভাতুষ্পুত্র।
পূর্ববর্তী:
« দুর্গাদাস শেঠ
« দুর্গাদাস শেঠ
পরবর্তী:
দুর্জন সিং »
দুর্জন সিং »
Leave a Reply