দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রাজা (১৮১৪ – ১৫.৭.১৮৭৮) কলিকাতা। জগন্মোহন (পূর্বনাম পরমানন্দ)। পৈতৃক নিবাস–ভাটপাড়া। পিতা পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ির ঘরজামাই ছিলেন। হিন্দু কলেজে পড়ার সময় সেই আমলের অন্যান্য ছাত্রদের মত তিনিও অধ্যাপক ডিরোজিও’র দ্বারা প্ৰভাবান্বিত হন। ডিরোজিওর প্রিয় ছাত্র দক্ষিণারঞ্জন ইয়ং বেঙ্গল দলের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় ১৮৩১ খ্রী. ‘জ্ঞানান্বেষণ’ পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। পরের বছর এই পত্রিকা দ্বিভাষিক সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। একজন প্ৰসিদ্ধ বাগ্মিরূপে সংবাদপত্র দলন-আইনের বিরোধিতা করেন। ‘জ্ঞানান্বেষণ’ সমিতির অধিবেশনে সরকার এবং পুলিসী ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন (৮-২-১৮৪৩)। ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’ স্থাপনেও (১৮৪৩) অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা এবং ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’ পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। সমাজ ও প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে চিরদিনের বিদ্রোহী কৃষ্ণমোহন খ্ৰীষ্টধর্ম গ্রহণ করে আত্মীয়স্বজন কর্তৃক বিতাড়িত হলে তিনি তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। উকীল হিসাবে তিনি উন্নতি না করলেও সরকার কর্তৃক কলিকাতার প্রথম ভারতীয় কালেক্টর নিযুক্ত হন। পরে মুর্শিদাবাদ নবাব-সরকারেও চাকরি করেন। সম্ভবত উকীল হিসাবে বর্ধমানরাজ তেজচন্দ্রের বিধবা রাণী বসন্তকুমারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়; পরে তিনি তাকে রেজিষ্ট্ৰী করে বিবাহ করেন। এই বিবাহে গৌরীশঙ্কর (গুড়গুড়ে) ভট্টাচার্য অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। এই ঘটনায় কলিকাতা তোলপাড় হয় ও তিনি যৌবনের সুহৃদগণ কর্তৃক পরিত্যক্ত হন। এক সময় শিক্ষাব্রতী হেয়ার সাহেবকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। হেয়ার সাহেব ঋণশোধে অসমর্থ হয়ে তাকে জমি লিখে দেন। ১৮৪৯ খ্ৰী. বেথুন সাহেবকে স্ত্রী-শিক্ষার জন্য তিনি সেই জমি দান করেন। সমাজ-পরিত্যক্ত দক্ষিণারঞ্জন কলিকাতা ত্যাগ করে ১৮৫১ খ্রী. সপরিবারে লক্ষ্ণৌ যান। ক্ৰমে সেখানে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। সিপাহী বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সরকারকে নানাভাবে সাহায্য করে পুরস্কারস্বরূপ শঙ্করপুরের বিদ্রোহী তালুকদারের বাজেয়াপ্ত তালুক লাভ করেন (১৮৫৯)। লক্ষ্ণৌ তথা অযোধ্যার সহকারী অবৈতনিক কমিশনার নিযুক্ত হন। সেখানে ‘লক্ষ্ণৌ টাইমস’, ‘সমাচার হিন্দুস্থানী’ ও ‘ভারত পত্রিক’ নামে সংবাদপত্ৰ প্ৰকাশ করেন। জমিদারদের শিক্ষায়তন ওয়ার্ড ইনস্টিটিউটের বেসরকারী পরিদর্শক ছিলেন। অযোধ্যা ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সমিতি (১৮৬১) ও লক্ষ্ণৌ ক্যানিং কলেজ স্থাপন তার অন্যতম কীর্তি। এখানে রাজনৈতিক আন্দোলনেরও নেতা ছিলেন। সরকার-মনোনীত এবং জননির্বাচিত সমানসংখ্যক সভ্য নিয়ে প্ৰাদেশিক সরকার গঠনের জন্য আন্দোলন করেন। এইসব কারণেই সম্ভবত তখনকার রাজপুরুষদের মধ্যে তাঁর প্রতিপত্তি বিনষ্ট হয়। ১৮৭১ খ্ৰী. লর্ড মেয়ে কর্তৃক ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত হন।
পূর্ববর্তী:
« দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়
« দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়
পরবর্তী:
দর্পদেব »
দর্পদেব »
Leave a Reply