ত্ৰৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, মহারাজ

ত্ৰৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, মহারাজ (১৮৮৯ – ৯.৮.১৯৭০) কাপাসাটিয়া-ময়মনসিংহ। দুর্গাচরণ। প্ৰবেশিকা পরীক্ষার ঠিক আগেই ১৯০৮ খ্রী. বিপ্লবাত্মক কাজের জন্য গ্রেপ্তার হলে এখানেই প্ৰথাগত শিক্ষার ইতি হয়। ১৯০৬ খ্রী. সমিতিতে যোগ দেন। জাতীয়ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যায়াম-প্রতিষ্ঠান গঠন করে নিজ জেলায় বিপ্লবী ঘাঁটি তৈরী করতে থাকেন। ১৯০৯ খ্রী. ঢাকায় আসেন এবং ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলায় পুলিস তার সন্ধান শুরু করলে আত্মগোপন করেন। এসময়ে আগরতলার উদয়পুর পাহাড় অঞ্চলে গিয়ে ঘাঁটি তৈরি করেন। ১৯১২ খ্রী. গ্রেপ্তার হন। পুলিস একটি হত্যা মামলায় জড়ালেও প্রমাণাভাবে মুক্তি পান। ১৯১৩–১৪ খ্ৰী. মালদহ, রাজশাহী ও কুমিল্লায় ঘুরে গুপ্ত ঘাঁটি গড়তে থাকেন। ১৯১৪ খ্রী. পুলিস তাকে কলিকাতায় গ্রেপ্তার করে বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলার আসামীরূপে আন্দামানে পাঠায়। ১৯২৪ খ্রী’ মুক্তি পেয়ে দেশবন্ধুর পরামর্শে দক্ষিণ কলিকাতা জাতীয় বিদ্যালয়ের ভার গ্ৰহণ করেন। ১৯২৭ খ্রী. গ্রেপ্তার হয়ে ব্ৰহ্মদেশের মান্দালয় জেলে প্রেরিত হন। ১৯২৮ খ্রী. তাকে ভারতে এনে নোয়াখালির হাতিয়া দ্বীপে অন্তরীণ করে রাখা হয়। এই বছরই মুক্তি পেয়ে উত্তর ভারতে যান এবং চন্দ্ৰশেখর আজাদ প্ৰমুখের সঙ্গে হিন্দুস্থান রিপাবলিকান আর্মিতে যোগ দেন। বিপ্লবী দলের আদেশে ব্ৰহ্ম দেশের বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্ৰহ্মদেশে যান। ১৯২৯ খ্রী. লাহোর কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৩০ খ্রী. গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৩৮ খ্রী. মুক্তি পান। সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে রামগড় কংগ্রেসে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহ ঘটানোর চেষ্টায়। ভারতীয় সৈন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সুবিধা করতে পারেন নি। এ সময়ে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হন। ১৯৪২ খ্রী ‘ভারত-ছাড়’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৪৬ খ্রী. মুক্তি পেয়ে নোয়াখালিতে সংগঠন গড়ার চেষ্টা করেন। স্বাধীনতালাভের পর পূর্ব-পাকিস্তানে নাগরিক হিসাবে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। ১৯৫৪ খ্রী. সংযুক্ত প্ৰগতিশীল দলের প্রার্থী হিসাবে পর্বপাকিস্তান অ্যাসেমব্লিতে নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৫৮ খ্ৰী তার নির্বাচন অগ্রাহ্য হয় এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এমনকি সামাজিক কাজকর্মেও তার উপর বাধা আরোপ করা হয়। ১৯৭০ খ্ৰী. পর্যন্ত স্বগ্রামে প্রকৃতপক্ষে নির্জনবাস করেন। চিকিৎসার জন্য কলিকাতায় আসেন। এই সময় সংবর্ধনার জন্য তাকে দিল্লীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান।