তিতুমীর (১৭৮২ – ১৮৩১) হায়দরপুর (বাদুরিয়া থানা)–চব্বিশ পরগনা। অন্য নাম মীর নিশার আলী। জমির দখল ও শোষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তৎকালীন স্বাভাবিক প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা এই কৃষক – সন্তান প্রথম যৌবনে লাঠিখেলা, অসিচালনা শিখে পালোয়ানরূপে জমিদার বাড়িতে চাকরি করা-কালে দাঙ্গার অপরাধে কারাবাস করেন। কারামুক্তির পর মক্কায় যান। সেখানে ওয়াহাবী নেতা সৈয়দ আহম্মদের কাছে ওয়াহাবী আদর্শে দীক্ষিত হয়ে দেশে ফেরেন এবং বারাসত অঞ্চলকে কেন্দ্র করে চব্বিশ পরগনা, নদীয়া, যশোহর ও ফরিদপুরের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ওয়াহাবী ধর্মমত অনুসারে ইসলামের সংস্কার সাধনের জন্য প্রচার শুরু করেন। ক্রমে দরিদ্র চাষী ও তাঁতি-সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর অনুগামী হয়ে ওঠে। এইভাবে নিজের শক্তিবৃদ্ধি করে তিনি নিজ অঞ্চল থেকে জমির কর আদায় ও নীলকরদের উৎসাদন করেন। মিস্কিন শাহ নামে একজন ফকির তিতুমীরের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ফলে তিনি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। ক্রমে স্থানীয় জমিদারদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুঁড়ার জমিদারবাড়ি আক্রমণ করে তিনি বিফল হন। পরে টাকী ও গোবরডাঙ্গার জমিদারদের নিকট তিনি কর দাবি করেন। গোবরডাঙ্গার জমিদারের প্ররোচনায় মল্লাহাটির কুঠিয়াল ডেভিস সাহেব তাকে দমন করতে গিয়ে পরাজিত হন। গোবরা-গোবিন্দপুরের জমিদারও এক সংঘর্ষে নিহত হন। বারাসতের সাহেব কালেক্টর তিতুকে দমন করতে এসে পরাজিত হন ও একজন দারোগা নিহত হয়। এই জয়ের ফলে তার সাহস বৃদ্ধি পায়। তিনি নারিকেলবেড়িয়া নামক স্থানে এক বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে পাঁচশত অনুগামী সহ বাস করতে থাকেন এবং নিজেকে স্বাধীন বাদশাহ ঘোষণা করে শাসন চালাতে থাকেন। এই সময় কয়েকটি ইংরেজ আক্রমণ প্ৰতিহত করেন। ১৪ নভেম্বর ১৮৩১ খ্রী. কলিকাতা থেকে যে সৈন্যদল আসে তারাও তিতুমীরের কাছে পরাজিত হয়। অবশেষে ইংরেজরা অশ্বারোহী সৈন্য ও কামানের সাহায্যে তিতুর দুর্গ ধ্বংস করায় এই বিদ্রোহ দমিত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে তিতুমীর নিহত হন এবং তার ভাগিনেয় ও সেনাপতি মাসুমের ফাঁসি হয়। ইতিহাসে এই বিদ্রোহ ব্রিটিশ ভারতে গণবিক্ষোভ বলে বর্ণিত হয়েছে। কলভিন নামক ইংরেজ তার রিপোর্টে বলেছেন–বিক্ষোভের মূল কারণ হচ্ছে ‘জমিদারদের ক্ষমতালিন্সা ও যে-কোনও অজুহাতে শোষণ’। করের বোঝা থেকে মুক্তি পাবার জন্য সাধারণ চাষীরা বিদ্রোহের জন্য উন্মুখ ছিল। তিতুমীর তাদের নেতৃত্ব দিয়ে গণশক্তিকে সংহত করতে চেয়েছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« তাহির মহম্মদ
« তাহির মহম্মদ
পরবর্তী:
তিনকড়ি »
তিনকড়ি »
Leave a Reply