তারাচাঁদ চক্রবর্তী (১৮০৪ – ১৮৫৫) কলিকাতা। ডেভিড হেয়ারের স্কুল থেকে ফ্রী স্কলার হয়ে হিন্দু কলেজে প্ৰবেশ করেন। অর্থাভাবে পড়াশুনা শেষ করতে অপারগ হলেও, হিন্দু কলেজে প্রথম ছাত্রদলের অন্যতম নেতা ও ডিরোজিওর শিষ্যদলের প্রবক্তা ছিলেন। এজন্য ইংরেজী সংবাদপত্রগুলি ব্যঙ্গ করে তার দলকে ‘চক্রবর্তী ফ্যাকশন’ নামে অভিহিত করে। এই দলই পরে ‘ইয়ং বেঙ্গল’ নামে খ্যাত হয়। কর্মজীবনে তিনি প্রথমে সংস্কৃত সাহিত্যের ইংরেজীতে অনুবাদে বিখ্যাত সংস্কৃতজ্ঞ প্ৰাচ্যবিদ উইলসনকে সাহায্য করেন। পরে ইংরেজ ব্যারিস্টারদের কেরানী, হেয়ার স্কুলের হেডমাস্টার ও হুগলী জেলার মুন্সেফ হন। ১৮৩৭ খ্রী. নাগাদ প্যারীচাঁদ মিত্রের সঙ্গে ব্যবসায় করেন। অত্যন্ত স্বাধীনচেতা হওয়ায় ইংরেজী উপরওয়ালারা তাকে পছন্দ করতেন না। ১৮৪৬–১৮৫১ খ্রী. পর্যন্ত তিনি বর্ধমানরাজের দেওয়ান ও পরে ঐ স্থানের সর্বাধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত ছিলেন। ইংরেজী ও বাংলা ছাড়া ফারসী, হিন্দুস্থানী, সংস্কৃত এবং আইন-বিষয়েও তার গভীর জ্ঞান ছিল। রামমোহন রায়ের বন্ধু, ব্ৰাহ্মসমাজের প্রথম সম্পাদক (১৮২৮) এবং সাধারণ জ্ঞানোপার্জিকা সভার স্থায়ী সভাপতি ছিলেন (১৮৩৮)। এই সভার মাসিক অধিবেশনে রাজনীতি, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল ও বিজ্ঞান সম্বন্ধে ইংরেজী অথবা বাংলায় রচনা পাঠ করা হত। একবার বিখ্যাত অধ্যাপক রিচার্ডসন হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষরূপে কলেজ বাড়িতে সরকারের বিরোধী সমালোচনায় বাধা দেন। সভাপতি তারাচাঁদ সে আপত্তি দৃঢ়তার সঙ্গে খণ্ডন করেন এবং রিচার্ডসনকে কথা তুলে নিতে হয়। ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’ নামে দ্বিভাষিক পত্রিকার লেখকরুপে রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করার চেষ্টা করেন। সরকারী উচ্চপদে ভারতীয় নিয়োগের দাবি–প্ৰধানত এই ধরনের আন্দোলন ছিল সে যুগের রাজনীতির বিষয়। এই উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ রাজনীতিক জর্জ টমসনের আনুকূল্যে এবং তার নেতৃত্বে নব্য দল ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’ স্থাপন করে। কিছুদিন তিনি ‘কুইল’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। এই পত্রিকায় সরকারের কার্যের দোষগুণের সমালোচনা করতেন। ফলে পত্রিকাটি সরকার পক্ষের অপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮২৭ খ্রী. ইংরেজী-বাংলা অভিধান রচনা তার প্রধান কীর্তি। ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের পিতা বিশ্বনাথ তর্কভূষণের সহযোগিতায় তিনি মনুসংহিতার ইংরেজী সটীক অনুবাদ চার খণ্ডে প্রকাশ করেন।
পূর্ববর্তী:
« তারকেশ্বর সেন
« তারকেশ্বর সেন
পরবর্তী:
তারাচাঁদ দত্ত »
তারাচাঁদ দত্ত »
Leave a Reply