তারকদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (২.৪.১৮৯৮ — ২৬.২.১৯৫৭) পাটশিমলা–চব্বিশ পরগনা। নদীয়ার প্রখ্যাত জননেতা। বালেই কাকার সঙ্গে কৃষ্ণনগরে আসেন এবং এখানেই তার ছাত্রজীবন ও রাজনৈতিক জীবন কাটে। কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবীরা নদীয়ার শিবপুর গ্রামে যে রাজনৈতিক ডাকাতি করেন তার মামলায় জড়িয়ে পড়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। কলেজের অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে অব্যাহতি পেলেও বাঙলা থেকে বহিস্কৃত হতে হয়। এ সময় ভারতের নানা তীর্থস্থান পরিভ্রমণ করেন এবং বহু সাধু-সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে আসেন। সাধু তারাক্ষ্যাপা–যিনি পূর্বজীবনে যুবকদের বিপ্লবী-মন্ত্রে দীক্ষা দিতেন, তার সঙ্গে এ সময়েই তার সাক্ষাৎ হয়। দেশে ফিরে এসে তিনি কৃষ্ণনগরে ‘দরিদ্রভাণ্ডার’ ও ‘সৎকার সমিতি’ প্ৰতিষ্ঠা করে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের নিয়ে মুষ্টিভিক্ষা করে সেবাকাজ চালান। পরে ‘সাধনা লাইব্রেরী’ ও ‘অ্যাথলেটিক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হলে তার সঙ্গেও যুক্ত হন। জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক থেকে পরে তিনি সভাপতি হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গান্ধীজী ও কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের যে মতভেদ হয় তাতে নেতাজীকে সমর্থন করার জন্য বঙ্গীয় প্ৰাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সঙ্গে নদীয়া জেলা কংগ্রেস কমিটিও বাতিল হয়ে যায়। তখন তিনি সুভাষচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসাবে তার সহযোগীদের নিয়ে বাতিল বিপিসিসি ও বাতিল জেলা কংগ্রেসেই থেকে যান। কংগ্রেসের মধ্যে প্ৰগতিশীল ব্লক বা ফ্রন্ট হিসাবে নেতাজী যখন ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’ গঠন করেন, তিনি ছিলেন তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং জেলা ফরোয়ার্ড ব্লকের সভাপতি। ১৯২৬ খ্রী. থেকে বিভিন্ন সময়ে ১৬ বছরের বেশি বিনাবিচারে আটক থাকেন। পশ্চিমবঙ্গ ব্যবস্থা-পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রী. নোয়াখালি থেকে দাঙ্গাপীড়িত মানুষ ও দেশবিভাগের পর শরণার্থীরা এ দেশে আসতে আরম্ভ করলে তিনি সহকর্মীদের নিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সংখ্যালঘুদেরও তিনি অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। নদীয়া জেলা শিক্ষাপর্ষদের সভাপতিরূপে তারই চেষ্টায় জেলায় ১৫০টি থেকে ১৫০০ প্ৰাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।
পূর্ববর্তী:
« তানভীর মোকাম্মেল
« তানভীর মোকাম্মেল
পরবর্তী:
তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় »
তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় »
Leave a Reply