জ্যোতির্ময়ী গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৮৯/৯০ – ২২.১১.১৯৪৫) কলিকাতা। পিতা ব্ৰাহ্মসমাজের খ্যাতনামা নেতা দ্বারকানাথ। বাঙলার প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট ডাক্তার কাদম্বিনী দেবী তার মাতা। ব্ৰাহ্মবালিকা শিক্ষালয় ও বেথুন কলেজে শিক্ষা। এম-এ পাশ করে প্রথমে বেথুন স্কুলে শিক্ষকতা করেন ও পরে কটক র্যাভেনশ কলেজে মহিলা বিভাগ খোলা হলে অধ্যক্ষা নিযুক্ত হন। কিছুদিন পর লালা লাজপতের আমন্ত্রণে জলন্ধর কন্যা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষার পদে যোগ দেন। সেখান থেকে কলম্বো বুডিস্ট গার্লস কলেজে প্রথমে অধ্যাপিকা ও পরে অধ্যক্ষা হন। কিছুদিন ব্ৰাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়েও অধ্যক্ষার কাজ করেন। লেউী অবলা বসু প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাসাগর বাণীভবন সংগঠনেও সক্রিয়ভাবে সাহায্য করতেন। ১৯২০ খ্রী. কলিকাতায় জাতীয় কংগ্ৰেসে নারী স্বেচ্ছাসেবিকাবাহিনী গঠন করেন। অসহযোগ আন্দোলনের পর বঙ্গীয় প্ৰাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সদস্য হন। দেশবন্ধুর স্বরাজ্য পার্টি কর্পোরেশনের পরিচালনভার গ্রহণ করলে প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সদস্যা এবং ১৯৩৩ খ্রী. কপোরেশনের প্রথম মহিলা অল্ডারম্যান নিযুক্ত হন। গান্ধীজীর লবণ আইন অমান্য আন্দোলনে (১৯৩০) কলিকাতায় উৰ্মিলা দেবীর নেতৃত্বে গঠিত ‘নারী সত্যাগ্ৰহ সমিতি’র তিনি সহ-সভাপতি ছিলেন। সমিতির পরিচালনায় বড়বাজারে বিদেশী বস্ত্রের দোকানে পিকেটিং চলে। এই সময়ে মেদিনীপুরে ম্যাজিস্ট্রেট পোড়ীর নির্মম অত্যাচারের ঘটনার প্রত্যক্ষদৃষ্ট বিস্তৃত বিবরণ তিনি ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় ‘Another Crucifixion’ নামে এক প্রবন্ধে প্রকাশ করেন। দেশবন্ধুর মৃত্যুতে কলিকাতা শহরে ১৪৪ ধারা থাকা সত্ত্বেও জুন ১৯২৫ খ্রী. মহিলাদের যে বিরাট শোক-মিছিল কলেজ স্কোয়ার থেকে দেশবন্ধু পার্কে পৌছায়, তিনি ও উর্মিলা দেবী তার নেতৃত্ব দেন। সমস্ত পথে ঘোড়সওয়ার পুলিস আক্রমণের জন্য প্ৰস্তুত ছিল। মহিলারা দু’পাশে থেকে পুরুষ শোকযাত্রীদের রক্ষা করেন। কলিকাতায় তখনও মহিলাদের ওপর আক্রমণের নির্দেশ ছিল না। সমস্ত পথ ঘোড়সওয়ারদের সঙ্গে ঠোকাঠুকিতে কয়েকজন মহিলা আহত হন, তা সত্ত্বেও কোন সময় মিছিল ছত্ৰভঙ্গ হয় নি। পরদিন উর্মিলাদেবী সহ তার ছ’মাসের কারাদণ্ডের আদেশ হয়। ২৬ জানুয়ারী ১৯৩১ খ্ৰী. কলিকাতার পুলিস কমিশনার টেগার্টের আক্রমণের মুখে তিনি নিজে আহত হয়েও সুভাষচন্দ্ৰকে বঁচোন। ১৯৩২ খ্রী. আইন অমান্য আন্দোলনে পুনরায় কারারুদ্ধ হন। ডাক্তারের নিষেধক্রমে বিয়াল্লিশের আন্দোলনে যোগ দিতে পারেন নি। কিন্তু আজাদ হিন্দ বাহিনীর নায়কদের বিচারের সময় দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর ডালহৌসী স্কোয়ার যাত্রার দাবির সত্যাগ্ৰহে যোগ দিয়ে ফেরার সময়ে একটি মিলিটারী গাড়ী তার গাড়ীতে যে ধাক্কা দেয়। তার ফলে আহত হয়ে তিনি মারা যান।
পূর্ববর্তী:
« জ্যোতির্ময় সেন
« জ্যোতির্ময় সেন
পরবর্তী:
জ্যোতিষ ঘোষ »
জ্যোতিষ ঘোষ »
Leave a Reply