জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন (১৩.৯.১৬৯৪ – ১৯.১০.১৮০৭) ত্ৰিবেণী-হুগলী। রুদ্রদেব তর্কবাগীশ। পিতা ও জ্যেষ্ঠতাতের নিকট ব্যাকরণ ও স্মৃতিশাস্ত্র এবং রঘুদেব বাচস্পতির নিকট ন্যায়শাস্ত্রের পাঠগ্রহণ করেন। ত্ৰিবেণীতেই চতুষ্পাঠী স্থাপন করে দীর্ঘজীবী এই পণ্ডিত মৃত্যুর একমাস পূর্ব পর্যন্তও অধ্যাপনায় রত ছিলেন। তার একক প্রচেষ্টায় সংস্কৃতচর্চায় নবদ্বীপের খ্যাতি প্ৰায় নিষ্প্রভ করে তোলেন। ইংরেজরা ১৭৬৫ খ্রীঃ বাঙলার দেওয়ানি লাভ করে দেশীয় বিচারপদ্ধতি ও আইন প্ৰস্তুতের জন্য এই পণ্ডিতের দ্বারস্থ হয়। স্মৃতি-সমুদ্র মন্থন করে ‘বিবাদ ভঙ্গার্ণব’ গ্ৰন্থ (১৭৮৮–৯২) সঙ্কলন তাঁর এক অবিস্মরণীয় কীর্তি। এক সময়ে হিন্দু দেওয়ানি বিচার-ব্যবস্থা এই গ্ৰন্থটিরই ইংরেজী অনুবাদের মাধ্যমে চলত। এ ছাড়া নব্যন্যায়ের বিভিন্ন প্রসঙ্গের উপর তিনি বিভিন্ন পত্রিকা রচনা করেছিলেন। মুর্শিদাবাদে নবাবের দেওয়ান নন্দকুমার এবং শোভাবাজার-রাজ নবকৃষ্ণ তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর পৃষ্ঠপোষক হয়েছিলেন। ক্লাইভ, হেস্টিংস, হার্ডিঞ্জ, কোলাবুক, জোনস প্রভৃতি ইংরেজ রাজপুরুষগণ দুরূহ বিষয় মীমাংসার জন্য তার সাহায্য নিতেন। ইংরেজ সরকারে বৃত্তিভোগী ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতদের মধ্যে তিনিই সম্ভবত প্ৰথম। বর্ধমানরাজ কীৰ্তিচন্দ্র এবং কৃষ্ণনগররাজ কৃষ্ণচন্দ্রও তার পরামর্শ নিতেন। প্রথম সুপ্রীম কোর্ট স্থাপিত হলে তাকে প্রধান-পণ্ডিতের পদগ্রহণে আহ্বান করা হয়। অস্বীকৃত হলে পৌত্র ঘনশ্যাম এই পদে নিযুক্ত হন। মৃত্যুকালে বিপুল ভূসম্পত্তি ও অর্থ রেখে যান।
পূর্ববর্তী:
« জগন্নাথ কোলে
« জগন্নাথ কোলে
পরবর্তী:
জগন্নাথ দাস »
জগন্নাথ দাস »
Leave a Reply