জগৎশেঠ – ‘জগৎশেঠ’ কোন ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়-মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত বণিকবংশের উপাধিমাত্র। ঐ বংশের বিখ্যাত ব্যক্তিগণ পর পর জগৎশেঠ নামেই পরিচিত ছিলেন। বাঙলাদেশে তথা ভারতবর্ষে ইংরেজ রাজত্বের সূচনায় ঐ জগৎশেঠদের বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল। মুর্শিদাবাদের শ্বেতাম্বর জৈন সম্প্রদায়ের ফতেচাঁদ নামক জনৈক শ্রেষ্ঠী ১৮শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে দিল্লীর বাদশাহ কর্তৃক এই উপাধিতে ভূষিত হন। এই উপাধি বংশ পরম্পরাগত ছিল। ১৭শ শতাব্দীর শেষভাগে তাদের আদিপুরুষ হীরানন্দ রাজস্থান থেকে এসে পাটনায় বসবাস শুরু করেন। ব্যবসায়-বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কুঠির সংখ্যাও বাড়ে। উত্তরাধিকারসূত্রে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্ৰ মানিকচাঁদ ঢাকা কুঠির মালিক হন এবং মুর্শিদাবাদে কুঠি স্থাপন করেন। তিনি সরকারী কোষাগার সুপরিচালনার এবং রোকার মারফৎ রাজস্ব জমা দেবার সহজ পন্থা আবিষ্কার করেন। নিঃসন্তান মানিকচাঁদের মৃত্যুর পর দত্তকপুত্র ফতেচাঁদ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে মুর্শিদকুলি খাঁর আস্থাভাজন হন ও মন্ত্রণাদাতা হয়ে ওঠেন; পরবর্তী নবাব সুজাউদ্দীনেরও আস্থাভাজন হন। ১৭৩৯ খ্রী সুজাউদ্দীনের মৃত্যুর পর পুত্র সরফরাজ খাঁ নবাব হলে, যাদের ষড়যন্ত্রে সরফরাজের পরিবর্তে আলীবর্দী সিংহাসন পান, ফতেচাদ তাদের অন্যতম। আলীবর্দীকে প্ৰথমে উড়িষ্যা ও বিহারে আফগানদের দৌরাত্ম্য ও পরে বর্গীর হাঙ্গামায় বিব্রত থাকতে হয়। এই সময় ফতেচাদ তাকে অর্থসাহায্য ও পরামর্শ দিতেন। একবার বর্গীরা মুর্শিদাবাদ লুণ্ঠনকালে শেঠের গদি থেকে দুকোটি আর্কট মুদ্রা লুঠ করলেও ব্যবসায়ে ভাটা পড়ে নি। তিনি প্ৰতি বছর নবাব-সরকারকে এক কোটি টাকা উপহার দিতেন। ১৭৪৪–৪৫ খ্রী. ফতেচাঁদের মৃত্যুর পর পৌত্র মহাতাবচাদ তার স্থলাভিষিক্ত হন। আলীবর্দীর আস্থাভাজন হলেও তিনি ইংরেজ বণিকদের সঙ্গে হৃদ্যতা করেন এবং ইংরেজদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হন। আলীবর্দীর মৃত্যুর পর ইংরেজরা মূলত তাঁর সাহায্যে মীরজাফরকে সিরাজের স্থলাভিষিক্ত করেন। মীরজাফরের পর মীরকাশিম মহাতাবচাঁদের সহযোগিতা পান নি। এজন্য নবাব সন্দেহক্রমে মহাতাবকে প্রথমে মুঙ্গের দুর্গে আটক করেন; পরে গিরিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তাকে আরও কয়েকজনের সঙ্গে গঙ্গার জলে ড়ুবিয়ে হত্যা করেন। বঙ্গে জগৎশেঠ পরিবারের ঐশ্বৰ্য বিলুপ্ত হলেও পরেশনাথ তীর্থে তাদের নির্মিত কয়েকটি মন্দির আজও দেখতে পাওয়া যায়।
পূর্ববর্তী:
« জগৎমল্ল
« জগৎমল্ল
পরবর্তী:
জন পিয়ার্সন »
জন পিয়ার্সন »
Leave a Reply