চারুশীলা দেবী১ (২৪.২.১৮৮২ – ৭.১.১৯৭৯) ঢাকা। প্রখ্যাত সমাজসেবী। বেথুন কলেজের শিক্ষা-শেষে ঢাকায় ইডেন হাইস্কুলে কাজ নেন। ১৯২৮ খ্রী. তার মাতুল স্বামী পরমানন্দ মহারাজের নির্দেশে আমেরিকায় যান ও সেখানে ‘আনন্দ আশ্রম’-এ কাজ করতে থাকেন। তিন বছর পর দেশে ফিরে এলে স্বামী শিবানন্দ মহারাজ তাকে দেশে থেকেই আমেরিকার আনন্দ আশ্রমের কাজ চালোনর আদেশ দেন। সেই অনুসারে ঢাকায় তিনি আনন্দ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় কপর্দকশূন্য অবস্থায় বহু বাধাবিঘ্নের মধ্যে আশ্রমের কাজ শুরু করে তিনি তাকে সফল প্ৰতিষ্ঠান-রূপে গড়ে তোলেন। দেশবিভাগের পর ঢাকায় দাঙ্গার সময় কয়েকজন ত্যাগী আশ্রমকন্যা ও শ্ৰীরামকৃষ্ণদেবের একখানি ফটো নিয়ে প্ৰায় একবস্ত্ৰে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় প্রেরিত চার্টার্ড প্লেনে কলিকাতায় চলে আসেন। এখানে ডাঃ রায়ের অনুরোধে নাকতলায় উদ্বাস্তু মেয়েদের জন্য ‘আনন্দ আশ্রম হোম’-এর পত্তন করেন (১৯৫১)। তার আগে ১৯৫০ খ্রী ঢাকা আশ্রমের মেয়েদের নিয়ে দমদমে একটি বাড়ি ভাড়া করে কাজ আরম্ভ করেছিলেন। ক্ৰমে সেখানে ‘সারদা বিদ্যাপীঠ’, ‘সারদা শিল্পপীঠ’ ও ছাত্রীদের জন্য বোর্ডিং প্রতিষ্ঠা করেন। পুনর্বাসন দপ্তরের অর্থসাহায্যে ১৯৬২ খ্রী. বনহুগলীতে বাড়ি ও জমি কিনে সেখানেই স্থায়িভাবে ঐ আশ্রম, বিদ্যাপীঠ ও শিল্পপীঠ তুলে নিয়ে যান। সংসার এবং সমাজ-উভয় ক্ষেত্রেই মেয়েরা যাতে মাথা উচু করে দাড়াতে পারে সেটাই ছিল তার সমস্ত শিক্ষাদানের লক্ষ্য।
চারুশীলা দেবী২ (১৮৮৩ – ?) মেদিনীপুর। রাখালচন্দ্ৰ অধিকারী। স্বামী বীরেন্দ্ৰকুমার গোস্বামী। ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের প্রথম ছাত্রী। ১২ বছর বয়সে বিবাহ। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম তাকে রক্ততিলক পরিয়ে স্বদেশ-মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯০৮ খ্রী. কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে যাবার আগে তারই বাড়িতে ক্ষুদিরাম আত্মগোপন করেছিলেন। বিধবা হবার পর ১৯২১ খ্রী. মেদিনীপুরে মহিলা সমিতি গঠন করেন। ১৯২২ খ্ৰী কলিকাতায় ট্রেনিং স্কুলে পড়াশুনা করে স্বগ্রামে গঠনমূলক কাজে ব্ৰতী হন। ১৯৩০ খ্ৰী. লবণ আইন ভঙ্গ আন্দোলনে যুক্ত হন এবং জনসাধারণকে আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে সভা-সমিতি করতে থাকেন। চন্দ্ৰাকরে সভা করবার সময় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা বেরোলে খড়গপুরে চলে আসেন এবং সত্যাগ্ৰহীদের সাহায্যাৰ্থ অর্থসংগ্রহের জন্য শ্রমিক-সভার আয়োজন করেন। নানা বাধা-বিপত্তিসত্ত্বেও সংগৃহীত অর্থ ও গহনাদি নেতা অন্নদা চৌধুরীর হাতে পৌঁছিয়ে দেন। বে-আইনী শোভাযাত্রা পরিচালনার জন্য তার ৬ মাসের কারাদণ্ড হয়। জেলে বিধবাদের স্বহস্তে রান্নার অধিকার অর্জনের জন্য অনশন করে সরকারকে তা মানতে বাধ্য করেন। এরপর আরও কয়েকবার বিভিন্ন কারণে কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন। ১৯৩৩ খ্রী. মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ নিহত হলে তিনি আত বছরের জন্য মেদিনীপুর থেকে বহিষ্কৃত হন। তিনি পুরী চলে যান। পরে ১৯৩৮ খ্রী. কলিকাতায় এসে কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষিকার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
Leave a Reply